আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশের মতো বেশি। হিসাব বলছে, বরাদ্দের অধিকাংশ অর্থই যাবে কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে।
বৈধপথে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহী করতে প্রতি একশ টাকার জন্য ২ টাকা হারে ভর্তুকি দেয় সরকার। প্রণোদনার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে চলতি অর্থবছরে। রেমিটেন্স পাঠানোর এই প্রণোদনা বহাল থাকবে আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরেও। রেমিটেন্স পাঠানোর প্রণোদনা দিতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা।
রপ্তানি আয়ে যে প্রণোদনা দিয়ে আসছে সরকার সেজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে চলতি অর্থবছরের মতোই ৬ হাজার ৮শ ২৫ কোটি টাকা। কৃষিখাতের জন্য বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৯ হাজার ৫শ কোটি টাকা। এসব কিছু মিলিয়ে আগামী অর্থবছরে ২২ হাজার ৮শ ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার খবর পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৩শ ৮৫ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বরাদ্দের সংখ্যাগুলো এখনো চূড়ান্ত না হলেও দেখে মনে হচ্ছে বরাদ্দর কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। এটা বিস্ময়কর। কারণ যে পরিস্থিতিতে এখন দেশের অর্থনীতি আছে স্বাস্থ্যখাত ও অর্থনীতি একটি বড় ধরনের অসুস্থতার মধ্যে আছে। এ অবস্থায় অগ্রাধিকার খাতগুলোর পরিবর্তন আশা করাটা খুবই যৌক্তিক। ফরমাল সেক্টরে নগদ সহায়তা দেওয়া ও কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো যাতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এমনকি ফরমাল সেক্টরেও যারা বেকার হয়েছেন বা যারা বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন সেখানে কর্মসংস্থানকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ভর্তুকিকে ব্যবহার করা। এসবই বড় অগ্রাধিকার খাত হওয়ার কথা ছিল।
নগদ প্রণোদনার বাইরেও বিভিন্ন খাতকে আর্থিক সহায়তা করে সরকার। এমন খাতগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎখাতে ৯ হাজার কোটি টাকা, খাদ্য নিরাপত্তায় ৫ হাজার ৯শ ৫৩ কোটি টাকা, জ্বালানি আমদানিসহ ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে ২৩ হাজার ৯শ ৫৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এসব খাতে ভর্তুকির পরিমাণ রয়েছে ২৩ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।
এর সঙ্গে নগদ প্রণোদনা ও সরকারের ঋণ সহায়তার সুদের হিসাব করলে মোট ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৮শ ৩৮ কোটি টাকা। যা বর্তমান অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৫ হাজার ৪শ ৫ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৪শ ৩৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টদের হিসাব বলছে, কৃষিসহ বেশ কয়েকটি খাতের বরাদ্দের বড় অংশই ব্যবহৃত হয় না। তাই আসছে বাজেটে ভর্তুকির অর্থ ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গতানুগতিক যে ভর্তুকি কাঠামো তা আরও সংশোধনের সুযোগ আছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎখাতে যে অতিরিক্ত সক্ষমতা সেটি ব্যবহার করতে না পারা এবং আগামীতেও সীমিত ব্যবহারের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ ও অন্যান্য বাড়তি ব্যয়ের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ দরকার সেটি কিছুটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এটিকে কমিয়ে আনায় যায় কি-না সরকার বিবেচনা করতে পারে।