নাটোর জেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে প্রায় ৬২ কোটি টাকার বিভিন্ন ফসলহানি হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে ৬২ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আম, লিচু, ভুট্টা, পাট, ধান ও খরিপ জাতীয় ফসল। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
আজ শুক্রবার (২২ মে) দুপুরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সাহা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আম্পানের প্রভাবে জেলার সাতটি উপজেলায় আম, লিচু, ভুট্টা, পাট, ধান ও খরিপ জাতীয় ফসলের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ভেঙে গেছে অসংখ্য গাছপালা। ক্ষতি হয়েছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। শুধু আম ও লিচুরই ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। আর অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকার।
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাদের তালিকা সরকারের কাছে পাঠানো হবে। যাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আর্থিক প্রণোদনার সুবিধা পায়।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে গত বুধবার (২০ মে) সারারাত ঝড়ো বাতাসে নাটোর জেলার বিভিন্ন উপজেলার দুর্গম গ্রামগুলোতে কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আম্পানের তাণ্ডবে বনপাড়া-হাটিকুমরুল ও নাটোর-পাবনা মহাসড়কের দুই পাশের গাছপালা ভেঙে রাস্তার ওপর পড়ে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কেও গাছ ভেঙে পড়ে। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) দুপুর দিনব্যাপী এসব সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এদিন সকাল থেকে গাছ অপসারণের কাজ চালিয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে মধ্য রাত থেকে নাটোরে শুরু হয় প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। ঝড়ের সঙ্গে অবিরাম বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে তলিয়ে যায় হাট-বাজারসহ নিম্নাঞ্চল। আম ও লিচুর পাশাপাশি ভুট্টা, কলা, মুগডাল, বাঙ্গি, তরমুজ ও পেঁপের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বড়াইগ্রাম ও লালপুরে বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে।
সিংড়া উপজেলার কলম গ্রামের কৃষক জুবায়ের হোসেন জানান, তার প্রায় দুই বিঘা জমিতে লাগানো লিচু বাগানের সব লিচু ঝরে পড়েছে। এতে তিনি প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জেলার বড়াইগ্রামের আদগ্রামে দুই শতাধিক কাঁচা ও আধাপাকা ঘর ভেঙে গেছে। টিনের চাল উড়ে গেছে গুরুদাসপুর উপজেলার মামুদপুর মোল্লাবাজার কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের। নাজিরপুরে ৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। বৈদুতিক খুটি উপড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় বৃহস্পতিবার দিনগত রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে ঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।