বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে জেলার চার হাজার ৬৩৫টি মৎস্য ঘের। পানির সঙ্গে ঘের ও পুকুরে থাকা সব মাছ বের হয়ে গেছে।
জেলার রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও কচুয়ার সবথেকে বেশি মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাষিদের স্বপ্ন ও ভরসা ভেসে গেছে বানের জোয়ারে। সরকারি হিসেবে এতে প্রায় দুই কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে চাষিদের। তবে বেসরকারি হিসেবে ঘের ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ১০ হাজার মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। এতে চাষিদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসেব থেকে চাষিদের ক্ষতি আরও বেশি হয়েছে।
চাষিরা জানায়, ঝড়ে জেলার কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ও রাস্তা উপচে এবং কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে শতশত মাছের ঘের ভেসে গেছে। ঘেরের মাছ বেরিয়ে গেছে। এতে আমরা দারুণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা গ্রামের নারী মৎস্য চাষি হালিমা বেগম বলেন, রাতের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে আমার ঘেরের মাছ বের হয়ে গেছে। সকালে ঘেরে গিয়ে নেট দিয়েছি। কিন্তু মাছ যা বের হওয়ার রাতেই বের হয়ে গেছে।
রামপাল উপজেলার নান্টু মল্লিক বলেন, ঘেরে বিক্রয় যোগ্য অনেক মাছ ছিল এবং নতুন করেও কিছু পোনা ছেড়েছিলাম। সব মাছ বের হয়ে গেছে। করোনায় দুই মাস ধরে আয় বন্ধ। বিক্রয় যোগ্য মাছের দাম কম থাকায় বিক্রিও করতে পারিনি। এরমধ্যে আবার আম্পানে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সব মাছ। শুধু আমার নয় এই উপজেলার অনেকেরই ঘেরের মাছ এভাবে বের হয়ে গেছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জোয়ারের জলোচ্ছ্বাস ও অতিবর্ষণে উপকূলীয় বাগেরহাটের ৪ হাজার ৬৩৫টি মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। এতে চাষিদের ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাগেরহাট জেলায় ৭৮ হাজার ১০০টি মাছের ঘের রয়েছে। চলতি অর্থ বছরের প্রায় ৩৩ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।