মহামারী করোনাভাইরাসের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি ও জীবিকা বাঁচাতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে হলেও শিল্প- কারখানা এবং ব্যবসা- প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা, অর্থনীতিবিদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট নাগরিকরা।
তারা বলেছেন, রপ্তানিমুিখ শিল্পসহ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হোক। তারা খাতওয়ারি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে টাস্কফোর্স গঠণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা এ সব কথা বলেন। সংগঠনটির সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় ব্যবসায়ী নেতা, অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন জেলা চেম্বার নেতারা অনলাইনে যুক্ত হন আলোচনায়।
ওই সভায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ডিসিসিআইসহ নানা ব্যবসায়ী সংগঠন ও চেম্বার নেতারা বলেন, লাখ রাখ শ্রমিকের জীবিকা ও দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য সীমিত আকারে হলেও পর্যায়ক্রমে শিল্প কারখানা খুলে দিতে হবে। তারা বলেন, চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, কম্বোডিয়ার মত প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো এ মুহূর্তে তাদের রপ্তানিমুখী শিল্প খুলে দেওয়ার বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রশংসা করেন।
ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে দেশের শিল্প কারখানা বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্তের আলোকে পর্য়ায়ক্রমে খুলে দিতে হবে। আমাদের অর্থনীতির কী পরিমাণ ক্ষতি হবে এবং আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কতটুকু আছে, সেসব বিষয় পর্যালোচনা করে অতি সতর্কতার সাথে কলকারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সারা পৃথিবী ঝুঁকির মধ্যে। জার্মানি, ফ্রান্সের মত দেশ করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে থাকার পরও তারা তাদের প্রধান শিল্প খাত ধীরে ধীরে খুলে দিচ্ছে। এফবিসিসিআই এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাত পর্যালোচনা করে আমাদেরকেও পদক্ষেপ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে তিনি এফবিসিসিআই’কে একটি গাইডলাইন তৈরি করে সরকারকে প্রদানের অনুরোধ জানান।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিউট- পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শিল্প ও দেশের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙে চিহ্নিত করে বিভাজন করা জরুরি। সেক্ষেত্রে এফবিসিসিআই, বিজিএমই ও অন্যান্য খাতকে সাথে নিয়ে খাত ভিত্তিক হেলথ প্রটোকল নির্ধারণ করে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার এই পর্যন্ত যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তা প্রশংসিত, কিন্তু এর পরিমাণ যথেষ্ট নয়, আরও বাডাতে হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, এফবিসিসিআই অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে শুরু থেকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আইএলও এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে সম্ভাব্য হেলথ প্রটোকল মেনে কিভাবে দেশের শিল্প কারখানা ধীরে ধীরে খুলে দেয়া যায় সেটা নিয়ে কাজ করছে সরকার।
ওই আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীক নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য আলোচকরা একমত হওয়ার কথা জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, খাদ্য দ্রব্য পরিবহণ ও কৃষিপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করার জরুরি। বিশেষ করে চলতি রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার বিষয়ে তারা জোর দেন।