করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে প্রায় পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ট্যুর অপারেটর অব বাংলাদেশের (টোয়াব)। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। করোনাভাইরাস দুর্যোগ কেটে গেলেও এর ধকল সামলে উঠতে পর্যটন খাতের অন্তত দুই বছর লেগে যাবে। বর্তমান এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য আপাতত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে দ্রুত টোয়াব সদস্যদের বিনা শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হককে পাঠানো এক চিঠিতে এমনটাই জানিয়েছেন টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান। গত সোমবার পাঠানো চিঠিতে টোয়াবের সভাপতি বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধারার পাশাপাশি পর্যটন খাতের জন্য সরকারের কাছে আপৎকালীন ও দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা দাবি করেন।
রাফেউজ্জামান বলেন, করোনার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটনশিল্প। ভাইরাসটির কারণে গত জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই খাতটিতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সে জন্য শুধু ট্যুর অপারেটররা নয়, শিল্পের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, বিমান সংস্থা, পর্যটক পরিবহন ও গাইডিং সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪০ লাখ পেশাজীবী। দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিল ইতিমধ্যে বলেছে, করোনায় বিশ্বজুড়ে ৫ কোটি মানুষ কাজ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
সংকট মোকাবিলায় সদস্যদের জন্য আপৎকালীন আর্থিক সহায়তার দাবি করেছে টোয়াব। সংগঠনটি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ১ থেকে ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানের জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি মূলধন বাবদ সহজ শর্তে দুই বছরের জন্য ঋণ চেয়েছে। যাতে করে কর্মচারীর বেতন-ভাতা, অফিস ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারে টোয়াবের সদস্য ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো
পর্যটনের এই কঠিন সময়ে আগামী তিন অর্থবছরের বাজেটে পর্যটন খাতের সুরক্ষা ও উন্নয়নে বড় অংকের টাকা বরাদ্দ রাখা। টোয়াবের সদস্যদের এআইটি এবং ট্রেড লাইসেন্স ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ফি, পস মেশিন ট্রানসেকশন ফি ও ইউলিটি বিল, টোয়াবের সহযোগী সদস্যদের যাদের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট আছে সেগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট মওকুফ করা এবং যাদের চলমান ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ও সুদ মওকুফ করা।
কক্সবাজার, সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, সিলেট, বরিশাল ও অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটন-সংশ্লিষ্ট স্বল্প আয়ের পেশাজীবীদের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে আপৎকালীন আর্থিক অনুদান নিশ্চিত করা।
টোয়াব মেম্বারদের মধ্যে কেউ COVID 19, এ আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে তাদের পরিবারকে ন্যূনতম ৩০-৫০ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান
করা । করোনাভাইরাসের কারণে টোয়াবের বাৎসরিক মেলা পিছিয়ে দেয়ায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে টোয়াব। ভবিষ্যতে এই মেলা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য আগামী ৩ বছর মেলার নির্ধারিত বিআইসিসি ভেন্যু ভাড়া মওকুফ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
দেশের সব আর্ন্তজাতিক ও আভ্যন্তরীণ বিমান বন্দরগুলোসহ অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণ স্থানসমূহে মিট এন্ড গ্রিট বা ইনফরমেশন বুথ স্থাপনে টোয়াবকে অনুমতি প্রদান করা এবং আর্থিক সহায়তা প্রদাণ করা। অন অ্যারাইভাল ভিসার পাশাপাশি ই-ভিসা প্রবর্তন করা এবং অন অ্যারাইভাল ভিসা ও ই-ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে টোয়ার-সদস্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রত্যয়ণ ও ভ্রমণসূচি বাধ্যতামূলক করা।
বাংলাদেশের পর্যটন-পণ্য উন্নয়ন ও প্রসারে ইউএনডব্লিউটিও, ইউএনডিপি, আইএলও, এডিবি, জাইকা, বিশ্বব্যাংক-সহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে অনুদান ও সহজ-ঋণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের পর্যটনের প্রচার, ব্র্যান্ডিং ও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন এবং এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও পর্যটন করপোরেশনের পাশাপাশি টোয়াবকে সম্পৃক্ত করা । এছাড়াও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক সকল প্রকার অনুষ্ঠান আয়োজনে টোয়াবকে সম্পৃক্ত করা ।
টোয়াবের সহযোগী সদস্যদের যাদের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট আছে সেগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহƒত বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট ক্রয়ে ট্যাক্স ফ্রি সুযোগ প্রদান করা।‘ট্রাভেল উইথ ট্যুর অপারেটর’ শীর্ষক সামাজিক প্রচার কর্মসূচি পরিচালনা করা, যেখানে বার্তা থাকবে যে সর্বোচ্চ সেবার জন্য টোয়াব সদস্যদের প্রাধান্য দেয়া।