রাজধানীর বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ডিম ও বেশিরভাগ সবজির দাম। তবে দাম বেড়েছে বয়লার ও লাল লেয়ার মুরগির। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে কমেছে ১০ টাকার ওপরে। বিপরীতে বয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫-১০ টাকা এবং লাল লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
শুক্রবার (২৪ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা বয়লার মুরগি কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫-১৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা। আর লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০-১৯০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে শান্তিনগরের ব্যবসায়ী মিলন বলেন, আজ মুরগির দাম অনেক বেশি। যে লাল লেয়ার মুরগি গত সপ্তাহে ১৯০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, তা আজ ২৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আর গত সপ্তাহে বয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ টাকা, তা আজ ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। মোকামে দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। বাড়তি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে সামনের সপ্তাহে মুরগীর দাম আবার কমে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেগুনবাগিচায় দেখা যায়, বয়লার মুরগি ১৬০ এবং লাল লেয়ার ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দামের বিষয়ে বাজারটির ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, লেয়ার মুরগির দাম গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ টাকা, আজ এক লাফে ২৪০ টাকা হয়েছে। আড়তেই কেজিতে ৫০ টাকার মতো বেশি দামে কিনতে হয়েছে। যে কারণে আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি।
মুরগির দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫২৫-৫৫০ টাকা কেজি। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮৫০ টাকা কেজি।
শান্তিগর ও সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ীদের মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে গরুর মাংস ৫২৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে রামপুরা মোল্লা বাড়ি ও হাজীপাড়ার ব্যবসায়ীরা বরাবারের মতো গরুর মাংসের কেজি ৫৫০ টাকা বিক্রি করছেন। এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা কোন মূল্য তালিকাও ঝুলাচ্ছেন না।
এদিকে মুরগির দাম বৃদ্ধির মাঝেই কমেছে ডিমের দাম। ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করছেন ৮০-৮৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০-৯৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে কমেছে ১০ টাকা।
ডিমের বিষয়ে হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. সাবু বলেন, রোজা শুরুর দিকে ডিমের দাম কিছুটা কমেছিল। এরপর গত সপ্তাহে কিছুটা বাড়ে। তবে চলতি সপ্তাহে ডিমের দাম আবার কমেছে। গত সপ্তাহে এক ডজন ডিম ৯০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কম দামে কিনতে পারায় ক্রেতাদেরও কম দামে দিচ্ছি। ঈদের আগে ডিমের দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
অপরদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম। পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো খুচরা বাজারে ২৫-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারিতে পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা। আগের মতোই কাঁচা মরিচ পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা।
বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে শসা, বেগুন, টমেটো, পটল, ঝিঙা, ধেড়স বরবটি, ধুন্দুল, শিমের। তবে আগের মতই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা পেঁপে। বাজার ভেদে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা কেজিতে।
শসা বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। গত সপ্তাহে ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম কমে ৪০-৫০ টাকা হয়েছে। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৪০ টাকা।
পটলের দাম কমে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। বরবটি পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজির মধ্যে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৭০ টাকা। গত সপ্তাহে ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম কমে ৪০-৫০ টাকায় নেমে এসেছে।
ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৭০ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়সের দাম কমে ৩০-৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৮০ টাকা।
ঝিঙ্গের কেজি ৪০-৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৭০ টাকা। শিমের কেজি ৩০-৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৬০ টাকা কেজি। আর গাজর আগের সপ্তাহের মতোই ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দামের বিষয়ে শান্তিনগরের ব্যবসায়ী আজাদ বলেন, অপ্রত্যাশিতভাবেই আজ সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। সবজির দাম হঠাৎ এতো কমে যাবে ধারণাতেও ছিল না। আড়তে কম দামে কিনতে পারায় বিক্রিও করছি কম দামে।
এদিকে কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাছের দাম এখনো বেশ চড়া রয়েছে। তেলাপিয়া মাছ আগের মতো বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা কেজি। পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা কেজি। রুই ২৮০-৬০০, পাবদা ৬০০- ৭০০, টেংরা ৫০০-৮০০, শিং ৫০০-৬০০ এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকা কেজি।