ভোটকেন্দ্রে দোল খাচ্ছেন নিরাপত্তা কর্মীরা

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা। ভোটকেন্দ্রের নাম বেলঘড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বগুড়া সদর উপজেলার অন্তর্গত এই কেন্দ্রে ভোট শুরুর সাড়ে ৩ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। ভোট পড়েছে মাত্র ১৩টি। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা খোশগল্প করছেন। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যরা স্কুলের মাঠে টানানো দোলনায় দোল খাচ্ছেন। সরেজমিনে উপজেলা নির্বাচন পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, সেখানে মোট ভোটার রয়েছে ২ হাজার ৪০০। ৬টি বুথ ভোট নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেও সকাল থেকে ভোটার নেই। তারা অলস বসে আছেন। সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে মাত্র ১৩টি। যার সবগুলোই পুরুষ ভোটার।

সকাল থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথার জিলা স্কুল কেন্দ্র ছিল ভোটার শূন্য। নিরাপত্তা প্রহরী কয়েকজন বেঞ্চে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বুথের ভেতরে গিয়েও দেখা গেল একই চিত্র। সবাই অপেক্ষা করছেন ভোটারের। কিন্তু কোনো ভোটার আসছে না। ফলে গল্পগুজবেই সময় কাটাচ্ছেন এজেন্ট এবং নির্বাচন কর্মকর্তারা। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৯৭৫। দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে মাত্র ৬টি।

শহরের মধ্যে নারুলী উত্তরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। বগুড়া সদর উপজেলার মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভোট এই কেন্দ্রে। মোট ভোটার ৬ হাজার। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টায় ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ৭টি।

বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলার ৯৫৪টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল থেকেই জেলার ৯৫ ভাগ ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। সকাল ১০টা পর্যন্ত অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ফাঁকা দেখা গেছে। ভোট কাস্ট হয়নি একটিও।

ফাঁকা কেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিতরা খোশগল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। কয়েকটি কেন্দ্রে দেখা গেছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা/কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া কেউ নেই। এমনকি নৌকা ছাড়া অন্য প্রার্থীদের এজেন্টও খুঁজে পাওয়া যায়নি এসব ভোট কেন্দ্রে।

গাবতলী উপজেলার চকবোচাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ৪টি। এই সেন্টারে নৌকা মার্কা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট আসেনি।

আদমদীঘি উপজেলার কুসুম্বী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রবিউল আলম জানান, ২ হাজার ৭১৪ জন ভোটারের মধ্যে সকাল ৯টা পর্যন্ত শতকরা ১ দশমিক ৪৭ ভাগ অর্থাৎ ৪০ ভোট কাস্ট হয়েছে। আদমদীঘি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নৌকা মার্কার প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই উপজেলায় ভোট দিতে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ একেবারেই কম।
শাজাহানপুর মাঝিড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ ঘণ্টায় পড়েছে ১২৩ ভোট। মোট ভোটার ৩ হাজার ৬০৮।

সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের ঝোপগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১০টি ভোট পড়েছে বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসার আবদুল মতিন। এই কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৩৫ ভোটার রয়েছে। এখানে নৌকা মার্কার এজেন্ট দেখা গেলেও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর মোটরসাইকেল মার্কার কোনো এজেন্ট নেই।

শহরের মালতিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। ভোটার উপস্থিতি না থাকার কারণে তারা নিজেদের মধ্যে খোশগল্প করে সময় কাটাচ্ছেন।

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, ভোটার উপস্থিতি একেবারেই নেই। সকাল ১০টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে মাত্র ১০টি। তবে ভোটার উপস্থিতি না থাকলেও ভোট কেন্দ্র এবং বাইরের পরিস্থিতি বেশ ভালো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, তাদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা কঠোর হস্তে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। কাউকে বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ দেয়া হবে না।

Scroll to Top