হবিগঞ্জের বাহুবলে আলোচিত রুমানা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। ঘটনার মূল হোতা তার প্রেমিক জুবায়ের আহমদ আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে বর্ণনা করেছে ঘটনার আদ্যোপান্ত। সে জানিয়েছে মাত্র ৫শ টাকার বিনিময়ে প্রেমিকাকে ধর্ষকদের হাতে তুলে দেয় সে। গণধর্ষণের পর তাকে আবার হত্যাও করা হয়।
শনিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান মাহমুদ প্রধানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ঘাতক প্রেমিক জুবায়ের আহমদ। এ সময় সে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। এ বিষয়ে দুপুরে পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তার বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান হবিগঞ্জ পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী।
ঘাতক জোবায়েরের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ২০১৮ সালের শুরুতে বাহুবল উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা রুমানা আক্তারের (২২) বিয়ে হয় বানিয়াচংয়ে। বিয়ের পরপরই সে পিত্রালয়ে চলে আসে। ইতিমধ্যে স্বামী তাকে ডিভোর্স দেয়। এদিকে পিত্রালয়ে এসে একই গ্রামের জুবায়ের আহমদ (২৪) নামে এক যুবকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ৩ মাস তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলে। ইতিমধ্যে প্রেমিকাকে নিয়ে কু-মতলব আঁটে জুবায়ের। সে তার কয়েকজন বন্ধুকে এ মতলবে যুক্ত করে। তাদের নিয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করতে চায়।
একই বছরের ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তার বন্ধু সাইফুর রহমানকে বলে ‘আজ রাতে তোদের জন্য একটি সুন্দরী মেয়েকে আনবো আনন্দ-ফূর্তি করতে। এ জন্য তোদেরকে জনপ্রতি ৫শ টাকা করে দিতে হবে।’ কথা অনুযায়ী তার বন্ধু সাইফুর রহমান, মামুনুর রশিদ, আবু সাইদ ও ইলিয়াস মিয়া তাকে ৫শ টাকা করে দেয়। পরে সে সবাইকে রাত সাড়ে ১০টায় গ্রামের ঈদগাহের কাছে থাকতে বলে। অপরদিকে সে রুমানাকে রাতে দেখা করতে বলে। তাকে বলে ‘আমি তোমার বাড়ির পাশে এসে শিস দিলে বেড়িয়ে এসো।’ কথা অনুযায়ী জুবায়ের রাত ১১টার দিকে রুমানাদের বাড়ির পাশে গিয়ে শিস দেয়। পরে রুমানা বেড়িয়ে এলে তাকে নিয়ে ঈদগাহের কাছে যায়।
সেখানে অন্যদের দেখতে পেয়ে চমকে উঠে রুমানা। সে পালিয়ে যেতে চায়। তখন সবাই মিলে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় রুমানা তার প্রেমিক জুবায়েরকে বলেন ‘তুমি আমার সঙ্গে বেঈমানী করেছো। আমি বিষয়টি সাবইকে জানাবো।’ তখন তাৎক্ষণিকভাবে তারা সিদ্ধান্ত নেয় রুমানাকে মেরে ফেলার। সাথে সাথে তাকে ধরে গলা কেটে হত্যা করে ঈদগাহের পাশে ধানের জমিতে লাশ ফেলে তারা পালিয়ে যায়।
ঘটনার পরদিন নিহতের মা বানেছা বেগম বাদী হয়ে বাহুবল থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। প্রথমে বাহুবল থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করে। তারা প্রায় ৪ মাস তদন্ত করলেও কোন কুলকিনারা করতে পারছিলো না। অবশেষে একই বছরের ৫ ডিসেম্বর মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই মোহাম্মদ মাইনুল ইসলামকে। প্রথমে সন্দেহভাজন হিসেবে চলতি বছরের ৬ মার্চ আটক করা হয় সাইফুর রহমানকে। তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ধর্ষক মামুনুর রশিদ, আবু সাঈদ ও জুবায়েরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রত্যেকেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সবশেষ জুবায়ের শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এদিকে এখনো পলাতক রয়েছে আরেক ধর্ষক ইলিয়াছ।