সিলেটের চোহাট্টায় ট্রাফিক পুলিশকে পিটিয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন সুনামগঞ্জ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক তানজিল আহমদ। প্রকৃত নাম তানজিল মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা ব্যবস্থাপক পদ নিয়ে বদলি হয়ে আসেন সুনামগঞ্জে।
বদলি হওয়ার পর থেকেই তার কর্মস্থলের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে তার কাছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষরা প্রচুর হয়রানির শিকার হয়েছেন। উনাকে কেউ ভাই বা আঙ্কেল বললে খুব ক্ষেপে যান তিনি। এনিয়ে তিনি ওই কর্মকর্তা বা সাধারণ মানুষকে খুব কথা শুনান বলে অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে এক কর্মকর্তাকে প্রত্যন্ত উপজেলায় বদলি করেন তিনি।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খাতে প্রয়োজন দেখিয়ে নিয়েছেন টাকা, রয়েছে সরকার দলীয় ক্ষমতা। ছাত্র জীবনে করেছেন ছাত্রলীগ।
সরেজমিনে, রোববার সুনামগঞ্জ মল্লিকপুর এলাকায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় অফিস প্রায় ফাঁকা। রয়েছেন দুজন কর্মচারী। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, তানজিল আহমেদকে দেখতে সিলেটে গিয়েছেন ৬ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই নেই। সিএ ও অফিস সহায়ক ছাড়া বাকিরা রয়েছেন মাঠে।
উনার ব্যাপারে অফিসের কর্মীরা ভালো ও বিনয়ী বললেও কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে ভিন্ন তথ্য। তিনি তার ক্ষমতার অপব্যাহার করেছেন সব সময়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, উনার সঙ্গে দেখা করা যায় না। প্রায় সময় উনি অফিসেই থাকেন না। যদিও তার সঙ্গে দেখা হয় কিন্তু উনাকে ভুলবশত একবার ভাই বলায় উনি আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছেন। উনাকে স্যার বলতে হবে। স্যার না বললে খুব খারাপ ব্যবহার করেন।
অফিসের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, উনাকে সবাই হাফ মেন্টাল (আধা পাগল) বলে ডাকেন। কারণ উনার রাগ নাকি সবচেয়ে বেশি। আর একবার তার রাগ উঠলে উনি কি করেন না করেন তিনি নিজেও জানেন না। তাছাড়া এতই ক্ষমতা যে কোনো কিছু করে বলেন আমি সরকারি লোক। আমার কিছু করা এত সহজ না। ছাত্রলীগ করে এসেছি।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলি হওয়া পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, উনি অফিসের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের জন্য টাকা তুলেছেন। আসবাপত্র কিনলেও নিম্নমানের। প্রতিবাদ করায় তাকে বদলি করে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বদলি হওয়া ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সরকারি কর্মচারী। যা হবে আমাদের সরকারকে জানাতে হয়। কিন্তু তানজিল সাহেব ব্যবস্থাপক হয়ে আসার পর কর্মস্থানের দৃষ্টপট বদলে যায়। অবশ্য তার আগে যিনি ছিলেন তিনিও দুর্নীতির মধ্যে ছিলেন এবং তানজিল সাহেবের ভালো বন্ধু ছিলেন। তার অনিয়মের মধ্যে অন্যতম হল বিভিন্ন আবসবাপত্র যেমন কম্পিউটার ক্রয়, চেয়ার, টেবিল, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কিন্তু তার মধ্যে অধিকাংশই তিনি কিনেননি। ভুয়া কাজ দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেলে সুনামগঞ্জ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক তানজিল আহমদ মোটরসাইকেল নিয়ে চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজারের দিকে আসছিলেন। উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে কতর্ব্যরত ট্রাফিক সদস্য মো. আলী তাকে বাধা দেন। এসময় তানজিল আহমদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তানজিল মোটরসাইকেল থেকে নেমে ট্রাফিক সদস্য মো. আলীর হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন।