ভারত থেকে আসা পানিতে বিপৎসীমায় রয়েছে কুমিল্লা গোমতী নদীর পানি। শঙ্কা করা হচ্ছে বাঁধ ভেঙে বন্যার। এদিকে, বাঁধে অবস্থান করছে চরের সহস্রাধিক পরিবার। পানিতে ডুবে গেছে দক্ষিণ কুমিল্লার অধিকাংশ সড়ক-ফসলি জমি।
সূত্র মতে, কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়েছে। টানা তিন দিনের বৃষ্টির সাথে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসছে পানি। এতে অন্তত ৪ হাজার হেক্টর চরের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
এদিকে, দক্ষিণ কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোটে অধিকাংশ সড়ক ডুবে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বিনষ্ট হয়েছে ফসলের জমি। বাড়ি-ঘরে উঠেছে পানি।
গোমতী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, গেল ১০ বছর পর গোমতীর পানি এতো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে চরের ভেতর সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
সরেজমিনে বুধবার কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথিলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়ায় গোমতীর তীর ঘেঁষে পানির ঢেউ। চরের হাজার একর সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। চরের বাসিন্দারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
মালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন আজাদ জানান, তিনি পরিবার নিয়ে চরের ভেতর বসবাস করেন। গেল ১০ বছরে গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি। তার বৃদ্ধ মা ও স্ত্রী সন্তান আর দু’টি গাভি নিয়ে গোমতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
জালুয়াপাড়া এলাকার কৃষক রহিম মিয়া জানান, এক লাখ টাকা ব্যয় করে ঝিঙা, শশীন্দা, করলা ও চাল কুমড়ার চারা রোপন করেছেন। লতাগুলো মাচায় উঠবে এই সময়ে গোমতীর পানিতে তার চারাগুলো পানিতে ডুবে গেছে।
টিক্কারচর এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। চরের ভেতর পানি গলা সমান হয়ে গেছে। ঘর থেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বের করতে পারেননি।
চাঁনপুর এলাকার সোহেল মিয়া জানান, তার সন্তানদের বই খাতা, নিজের গায়ের জামা কাপড় মঙ্গলবার রাতে নিয়ে বের হয়েছেন। আজ বুধবার বৃষ্টিতে ভিজে ঘর থেকে খাট আলমারি বের করেছেন।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা জানান, তিনি গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে গোমতীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরেছেন। বিভিন্ন এলাকায় গোমতীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব এলাকায় স্থানীয়রা মাটি ও বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
এদিকে, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে গোমতী ছাড়াও কাকড়ী, পাগলী ও সালদা নদী দিয়ে ভারত থেকে পানি আসা অব্যাহত রয়েছে। এতে করে কুমিল্লায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ। তিনি আরও জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, গোমতীর চরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়।