শারীরিক গড়ন দেখে বুঝার উপায় নেই নাসেম জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা দিতে এসেছে। ছোট শারীরিক গঠনের জন্য ঠিকমত হাটতে পারে না। তবে থেমে থাকে নি নাসেম। মায়ের কোলে চড়েই স্কুলে যায়। এমনকি মায়ের কোলে চড়েই এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সে।
নাসেমের বয়স বাড়লেও বাড়ে নি শরীর। পা দুইটা চিকন ও বাঁকানো। উচ্চতা আড়াই ফুট। জেলার তানোর উপজেলার মুন্ডমালার বহরইল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নাসেম আলীকে পরীক্ষার হলে তার মা কোলে করে নিয়ে এসে বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে যান। আবার পরীক্ষা শেষে কোলে করে তাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। মনে অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে নিরন্তর প্রচেষ্টায় এভাবেই এগিয়ে চলেছে নাসেম। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নাসেম একজন মানুষের মত মানুষ হতে চায়।
নাসেমের মা নাসিমা বেগম জানান, জন্ম থেকেই তার দুই পা থাকলেও হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারে না। তার লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে কোলে করেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান তাকে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া নাসেমের খেলাপড়ার খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র বাবা। কিন্তু তারপরও সে মনোবল হারায়নি।
নাসিমা বেগম আরো জানান, জন্মের পরে নাসেম ভাল ছিল। ছোট বেলায় টাইফয়েড জ্বর হওয়াই তাকে স্থানীয় এক হোমিও চিকিৎসা নেয়া হয়েছিল। তখন ভুল ওষুধে তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে। পরে অনেক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি।
নাসেম কোনো বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। তাই সে লেখাপড়া করতে চায়। কিন্তু গরীব ঘরে দুই মেয়ে ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে লেখাপাড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি। এছাড়া স্কুলে আনা নেয়ায় তার গরীব সংসারে অনেক কাজ কর্ম ফেলে তাকে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। তাতে অনেক সময়ও নষ্ট হয়।
প্রতিবন্ধী নাসেম আলী জানায়, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। তাই মনে ইচ্ছা শক্তি নিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু করে সে। পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষায় ৯০ ভাগ প্রশ্নের উত্তর লিখেছে সে। রবিবারের ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষাও খুব ভাল হয়েছে।
মু-ুমালা ভেন্যু কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কেন্দ্র সচিব ইব্রাহীম হাবিবুল্লাহ জানান, তার মা তাকে (নাসেমকে) প্রথম দিন কোলে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসায় তারা ভেবেছিলেন অন্য কেউ পরীক্ষা দিচ্ছে তাই ছোট শিশুকে সঙ্গে এনেছেন তার মা। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর পরেই বুঝা গেল আসলেই সে প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী। সে প্রতিবন্ধী হয়েও কোন সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে না। সাধারণদের মত তাদের সাথে পরীক্ষা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, ০৬ নভেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ