রাজশাহীর চারঘাট থানার প্রত্যাহার হওয়া ওসি মাহবুবুল আলমের ভাইরাল হওয়া বক্তব্যর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীতে নবনির্মিত কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধনীতে বিশেষ অতিথি ছিলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ওসির ভাইরাল বক্তেব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা প্রতিদিন শত শত সুপারিশ করি। কিন্তু আমার নির্বাচনী এলাকায় পোস্টেড হতে হবে বা কাউকে ট্রান্সফার করে দিতে হবে, আমি এমনটা কখনও করিনি। ঘটনার পরে পুলিশ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি- গত ১৫ বছরে কেউ বলতে পারবেন না আমার নির্বাচনি এলাকায় কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করতে হবে বা কাউকে বদলি করে দিতে হবে- আমি এমন সুপারিশ কখনই করিনি। ভোট করার জন্য তাকে চারঘাটে বদলি করে আনা প্রসঙ্গে ওসি মাহবুব যা বলেছেন তা ঠিক নয়। আমি তাকে বদলির জন্য কাউকে বলিনি। তার বিষয়ে জেলা পুলিশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, থানা কম্পাউন্ডে নিজের বিশ্রাম কক্ষে ডেকে নিয়ে মাদক আইনের মামলায় কারাগারে থাকা এক ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের মুখোমুখি আলাপের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে এরই মধ্যে ওসি মাহবুবকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে লাইনে সংযুক্ত করেছেন জেলার এসপি। অডিওসহ পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে রাজশাহী জেলা পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল।
এদিকে ওসি মাহবুল আলম অডিওতে দাবি করেন, নির্বাচন করতে মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম) আমাকে গাইবান্ধা থেকে চারঘাট থানায় নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া আর কারও কথা শুনি না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের আগে মুক্তা, সাব্বির, শুভকে (সন্ত্রাসী ও মাদক আইনের একাধিক মামলার আসামি) মন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া তাদের গ্রেফতার করা যাবে না। ৫ লাখ টাকা দিলে মুক্তভাবে মাদক ব্যবসার করার সুযোগ দেওয়া ও আরও দুই লাখ দিলে ডিবির একজন পরিদর্শককে বদলির ব্যবস্থা করার কথাও ওসি বলেন যা অডিও থেকে জানা যায়।
এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাকে ভোট করার জন্য এনেছেন- ওসির এমন মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় চলছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তারুণ্যের রোডমার্চ শেষে রাজশাহীতে দেওয়া এক বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চারঘাটের ওসিকে ভোট করার জন্য নিজ এলাকায় এনেছেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বিষয়টি বিএনপি বললেও সরকার অভিযোগ এড়িয়েছেন। এখন বিষয়টি আর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রশাসন দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সরকারের গোপন চক্রান্ত ফাঁস করেছেন ওসি।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চারঘাটের প্রত্যাহার হওয়া ওসি মাহবুব আলমের অডিও ক্লিপ ফাঁসের পর রাজশাহী জেলা পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়। রাতেই তাকে চারঘাট থানা থেকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে ওসি মাহবুব থানা কম্পাউন্ডে তার শয়নকক্ষে মাদক মামলার আসামি কালুর স্ত্রীর সঙ্গে আলাপে যা বলেন তা অডিও ক্লিপে ফাঁস হয়। কালুর মামলার তদবির করতে ওসির কাছে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী সাহারা বেগম।