কুমিল্লায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ইসি সচিবালয়ের ১২ কর্মকর্তাসহ আহত ৪০

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দেয় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে সোনার বাংলার ইঞ্জিনসহ ছয়টি বগি দুমড়ে মুচড়ে লাইন থেকে ছিটকে যায়। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১২ কর্মকর্তাসহ ৪০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত নয়টা ১০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। বিকল্প লাইন (ডাবল লাইন) দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে নিশ্চিত করেছেন লাকসাম রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী মাস্টার ইকবাল হোসেন।

এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম। তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত এবং সবার দোয়ার কারণে প্রাণে বেঁচে আছি। বগি লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়ায় আমরা সব কিছুর নিচে চাপা পড়েছিলাম। পরে উদ্ধারকারী লোকজন সেখান থেকে আমাদেরকে টেনে বের করে এনেছে। শরীরে কিছু আঘাত পেয়েছি, তবে তা খুব একটা গুরুতর নয়।

আহত সহকারী সচিব মোহাম্মদ আশফাকুর রহমান জানান, আমরা দুই কামরায় ছিলাম। আমাদের সবাই কম বেশি আহত হয়েছি। তবে চারজন একটু বেশি আহত হয়েছেন।

এই দুর্ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের ১২ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তারা হলেন, ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম, সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিন, সহকারী সচিব মোহাম্মদ আশফাকুর রহমান, আইসিটির সিস্টেম অ্যানালিস্ট মামুনুর হোসেন, নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার পিএস হাবিবা আক্তার, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও আবুল কাশেম মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, সহকারী প্রোগ্রামার শুধাংশু কুমার সরকার, এনআইডি উইংয়ের ফারজানা লিজা, রাঙ্গামাটি জেলার উপজেলা নির্বাচন অফিসার আমিনুল ইসলাম। বাকি দুজন আইসিটি অনুবিভাগের।

ইসির নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষে তারা ঢাকায় ফিরছিলেন। তাদের ট্রেনটি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা অফিস থেকে আমাদের কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনের লুপ লাইনে একটি মালবাহী ট্রেন অবস্থান করছিল। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা এক্সপ্রেস স্টেশনে ঢোকার সময় সিগনালের ভুলের কারণে লুপ লাইনে চলে গিয়ে থেমে থাকা মালবাহী ট্রেনটিকে থেকে ধাক্কা দেয়। এ দুর্ঘটনার পর থেকে দায়িত্বরত স্টেশন ম্যানেজারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রোববার রাতের দুর্ঘটনায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের তিনটি এসি চেয়ার কোচ, চারটি শোভন চেয়ার কোচ এবং ইঞ্জিন বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।

এ ধরনের দুর্ঘটনাকে বিরল বলে উল্লেখ করে চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান জানান, ঘটনা তদন্তে রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (চট্টগ্রাম) তারিক মো. ইমরানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।