অক্টোবরেই বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার জ্বালানী (ইউরেনিয়াম) আনতে সক্ষম হবে বলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। নিউক্লিয়ার জ্বালানী (ইউরেনিয়াম) আসা ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ পদার্পণ করবে বিশ্বের নিউক্লিয়ার ক্লাবে। ২০২৪ সালে পরমাণু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে এখন মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। আর এজন্য অক্টোবরেই পারমাণবিক জ্বালানি বা ইউরেনিয়াম আসছে দেশে। করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কারণে নির্মাণসূচিতে দেরি হলেও আর্থিক ও কারিগরি দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পটিতে ব্যয় অর্থাৎ কন্ট্রাক্ট প্রাইস বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। প্রকল্পে ভারী যন্ত্রপাতি সংস্থাপন শেষে এখন চলছে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি। নির্মাণ কাজের চারভাগের তিন ভাগই শেষ বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ঈশ্বরদীর রূপপুরের পরিত্যক্ত ধু-ধু বালুচর মেগা স্থাপনার সফল বাস্তবায়নে ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। সম্ভাবনা আর সক্ষমতার গল্পের নতুন অধ্যায় হয়ে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুর এখন বাংলাদেশের নাম ছড়াচ্ছে। পরমাণু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অর্ধযুগ আগে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে পরিকল্পনা করে কাজ শুরু হয়েছিলো এই মাটিতে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এখন দৃশ্যমান। ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনে দুটি ইউনিটে প্রস্তুতি চলছে। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা দিন-রাত জেগে নির্মাণের গন্তব্যে পৌঁছাতে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।
সরেজমিনে প্রকল্প ঘুরে জানা যায়, চার ভাগের তিন ভাগ নির্মাণকাজ বিশেষ করে পূর্ত কাজের ৯৫ ভাগই শেষ। ১ম ইউনিটের জন্য ১৭৫ মিটার উচ্চতার দুটি কুলিং টাওয়ারের নির্মাণ কাজও শেষ পর্যায়ে। আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষে ১ম ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভবনে নকশা অনুযায়ী সফলভাবে বসেছে ট্রান্সপোর্ট লক। ২৩৫ টন ওজনের এ যন্ত্রের মাধ্যমেই রিয়্যাক্টরে পারমাণবিক জ্বালানি লোড করা হবে। এছাড়া প্ল্যান্টের স্টার্ট-আপ পর্যায়ে ফুয়েল সিমুলেটর সরবরাহ এবং রিয়্যাক্টর রক্ষণাবেক্ষণের কাজও চলবে ট্রান্সপোর্ট লক দিয়ে। ট্রান্সপোর্ট লক ছাড়াও ১ম ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভবনের বহিঃসুরক্ষা দেয়ালে ডোম অংশে চূড়ান্ত কংক্রিটের কাজও শেষ। নির্ধারিত সময়ের ৪৫ দিন আগেই নকশা অনুযায়ী বসানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয় তাপ অপসারণ ব্যবস্থা বা প্যাসিভ হিট রিমুভাল সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত ডিফেকটরের স্টিল কাঠামো।
১ম ইউনিটের সাথেই পাল্লা দিয়ে ২য় ইউনিটের কাজগুলোও চলছে নির্ধারিত সূচিতে। শেষ ভাগের কাজ হিসেবে হিট এক্সচেঞ্জার, হিট এক্সচেঞ্জিং মডিউল কেসিং বসানোসহ টারবাইন ভবন, অক্সিলিয়ারি ভবনের নির্মাণকাজও সন্তোষজনক। সূক্ষ প্রযুক্তির এই প্রকল্প শতভাগ নিরাপদ বলেই আশ্বস্থ করছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আগামী জুনের মধ্যে আনুষঙ্গিক পূর্ত কাজ শেষ করার কথা জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকাকে বলেন, রূশ অর্থায়নে ভিভিইআর ১,২০০ টাইপের দুটি তৃতীয় প্রজন্মের রিয়্যাক্টর শতবছর ধরে নিরাপদেই অপেক্ষাকৃত কম দামে বিদ্যুৎ দেবে বাংলাদেশকে। একই সাথে দেশও উন্নীত হবে প্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন স্তরে।
তিনি জানান, রিয়্যাক্টর বিল্ডিং, টারবাইন বিল্ডিং, অবজিওলারী রিয়্যাক্টর বিল্ডিংসহ সবগুলো সিভিল কন্সট্রাকশন কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন আমরা বিভিন্ন ধরণের ফাইনাল টাস্ক যেগুলো থাকে যেমন কালার করা অর্থাৎ সিভিল কাজের এ অংশটুকু বাকি আছে। প্রিকমিশনিং ওয়ার্ক আমরা ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছি। ওপেন রিয়্যাক্টর কন্ডিশনে আমরা ফ্লাশিং কাজও সম্পন্ন করেছি। গ্রাজুয়ালি কমিশনিং কাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যেদিন নিউক্লিয়ার ফুয়েল বাংলাদেশে আসবে, প্রকল্প এলাকায় আনা হবে এবং সংরক্ষণ করা হবে সেদিন থেকে প্রকৃতঅর্থে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার ক্লাবে পদার্পণ করেছে অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ফুয়েলের মালিক হয়েছে বলে ধরা হবে। আমাদের নিউক্লিয়ার ক্লাবের গ্রাজুয়েশন সেদিন আমরা সম্পন্ন করবো। সেদিন আর দূরে নয়, আগামী অক্টোবরে বলে জানান তিনি।
পিডি আরও বলেন, প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক রিকোয়ারমেন্ট অনূসারে নিজস্ব সাইড ইনফ্রাকটাকচার তৈরী করেছি এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার যে অবলিগেশন ‘রিগার্ড টু সেফটি এন্ড সিকিউরিটি’ এবং ‘সেফগার্ড’ এটা প্রতিপালন করেই আমাদের ফুয়েল আনতে এবং রাখতে হচ্ছে।
ড. শৌকত বলেন, দেশের সব স্টেকহোল্ডার, আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার, আইইএ-এর স্টেকহোল্ডার সবাই সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে,সকল পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিয়্যাক্টরের র্স্টাট আপ শুরু করবো। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে আগামী ১০০ বছর সমানভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তা মাথায় রেখে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পের ব্যয় প্রসংগে তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সেটা ফিক্সড প্রাইস। নির্মাণে সময় বর্ধিত হওয়ার সাথে সাথে প্রজেক্টের ব্যয় বৃদ্ধি অর্থাৎ কন্ট্রাক্ট প্রাইস বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।