কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকার হাশমত উদ্দীন উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ বছরের ছয় মাসই জলাবদ্ধ থাকে। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার রাস্তায়ও থাকে হাঁটুপানি। বৃষ্টি বেশি হলে শ্রেণিকক্ষেও পানি ঢুকে পড়ে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগ পোহায়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিদ্যালয়টি নিচু জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। বর্ষাকালে পৌরসভার রাস্তায় জমে থাকা পানি বিদ্যালয়ের মাঠে এসে পড়ে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের মাঠের পাশেই একটি বড় দিঘি আছে। বর্ষাকালে এলাকার সব পানি এই দিঘিতে গিয়ে পড়ে। তাই এ সময় দিঘির পানি উপচে মাঠে এসে জমে। এসব কারণে গত বছরের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আশপাশ ও মাঠ জলাবদ্ধ ছিল। এ বছর এপ্রিলের শুরু থেকেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শরীফ সাদি বলেন, দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ের এই করুণ দশা। পৌর কর্তৃপক্ষ রাস্তার পাশে যে নালা নির্মাণ করেছে, তা রাস্তা থেকে প্রায় এক ফুট উঁচু। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার পানি বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ বিদ্যালয়ে ১৯ জন শিক্ষক ও ৯৭০ জন শিক্ষার্থী আছে। এপ্রিলের শুরু থেকেই তারা হাঁটুপানি মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছে। এতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। পানি জমে থাকায় শিক্ষার্থীরা বছরের ছয় মাস মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না। এ সময় শিক্ষার্থীদের সমাবেশও হয় না। বর্ষাকালে শ্রেণিকক্ষে সাপ, ইঁদুর, ব্যাঙসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা দেয়। এতে পাঠদান করার সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকে।
বিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, গত শুক্র ও শনিবারের টানা বৃষ্টিতে মূল সড়ক থেকে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ রাস্তায় পানি জমে গেছে। বিদ্যালয়ের পাশের পুকুর উপচে পানি বিদ্যালয়ের মাঠসহ শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়েছে।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, মূল সড়ক থেকে রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের তিনটি একতলা ভবনের ১৬টি কক্ষের মধ্যে ১১টিতেই হাঁটুপানি। পানি জমে থেকে বিদ্যালয়ের আসবাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনীম জাহান বলে, প্রতিদিন পানি মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে অনেক কষ্ট হয়। পানি জমে থাকায় শ্রেণিকক্ষে সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা দেয়। এতে তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।
মো. আবদুস সালাম নামের বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক বলেন, তাঁর দুই ছেলে এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। কিন্তু বর্ষার সারাটা সময় বিদ্যালয়ের মাঠসহ শ্রেণিকক্ষগুলোতে পানি জমে থাকায় তাঁর ছেলেরা বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। কর্তৃপক্ষের দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।
বিদ্যালয়ের শরীরচর্চার শিক্ষক রহমাতুল্লীল আল-আমিন বলেন, ক্রিকেট, কাবাডি, ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলায় এ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হতো। কিন্তু দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ের মাঠ পানিবন্দী থাকায় খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের রাস্তা, মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ পানিবন্দী থাকায় পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অতিবৃষ্টিতে পানি ঢুকে পড়ায় গত শনি ও রোববারের অষ্টম, দশম শ্রেণির পরীক্ষাসহ অন্যান্য শ্রেণির পাঠদান স্থগিত করতে হয়েছে। এ নিয়ে আমরা পৌরসভার মেয়র ও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে কয়েকবার আবেদন করেছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। বৃষ্টির কারণে দিঘির পাড়ের রাস্তা ধসে পড়ায় এখন বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরও ধসে পড়ার হুমকিতে রয়েছে।’
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, সম্প্রতি তাঁরা হাশমত উদ্দীন উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দুর্দশার অবস্থা বর্ণনা করে বিষয়টি লিখিতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া বলেন, ‘বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার রাস্তার কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এখন করা যাচ্ছে না। আশা করছি, রাস্তার কাজ শেষ হলে দুর্ভোগ অনেকটা লাগব হবে।’ প্রথম আলো
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, ২৫ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম