চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার ২৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে ব্যবসায়ী টোকন আলীর লাশ। এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই জাহিদুল ইসলামসহ দুই কনস্টেবলকে ক্লোজ করা হয়েছে পুলিশ লাইনে।
এদিকে নিহতের স্ত্রী বলেছেন- এ ঘটনায় মামলা করতে চাই না; ছেলেমেয়ে নিয়ে যাতে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টোকন আলীর লাশ উদ্ধার করে ডুবুরি দল। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে মাথাভাঙ্গা নদীর অনুপনগর এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হলেও ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়ীয়া গ্রামের ওদু ছদ্দিনের ছেলে সবজি ব্যবসায়ী টোকন আলীসহ চারজন বুধবার দুপুরে গ্রামের ফেরিঘাটপাড়ার একটি বাঁশবাগানে তাস খেলছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় হাটবোয়ালিয়া ফাঁড়ি পুলিশ সেখানে আচমকা হানা দেয়। পুলিশের হাতে দুজন ধরা পড়লেও নাজিম উদ্দিন ও টোকন আলী পাশের খরস্রোতা মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেন।
কিছুক্ষণ পর নাজিম উদ্দিন সাঁতরে ওপারে চলে গেলেও টোকন আলী (৩৮) স্রোতের তোড়ে তলিয়ে যান। পুলিশের সহযোগিতায় বুধবার ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দিনভর খোঁজ করেও সন্ধান পান না টোকনের। বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা থেকে ডুবুরি দল এসে ফের তল্লাশি শুরু করে। শেষমেশ বেলা ২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ৬ কিলোমিটার দূর অনুপনগর গ্রামে মাথাভাঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় টোকনের লাশ পাওয়া যায়।
টোকন আলীর স্ত্রী মিতা খাতুন (৩০) বলেন, আমরা খুবই গরিব মানুষ। আমার স্বামী কোনোদিন জুয়া খেলে না। আমার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ছেলে সমুদ্রের বয়স মাত্র ৫ বছর। আমরা কোনো মামলা করতে চাই না। মামলা চালাতে তো পয়সা লাগে। কোথায় পাব? আপনারা পারলে একটা ব্যবস্থা করে দেন; যাতে আমার ছেলে-মেয়ে দুটো নিয়ে দুই মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি।
গ্রামের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, গ্রামের সাধারণ মানুষ অনেক সময় তাস খেলে সময় কাটায়। বুধবার টোকনসহ যে চারজনকে পুলিশ তাড়া দেয় তারা খেটেখাওয়া মানুষ। কোনোদিনও জুয়া খেলে না। পুলিশ উৎকোচ নেওয়ার জন্যই পরিকল্পিতভাবে ধাওয়া দিয়েছিল। টোকন সাঁতার না জানলেও পুলিশের ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয় এবং তলিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি আবদুল আলীম গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বুধবার রাতেই হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্পের অভিযুক্ত এএসআই জাহিদুল ইসলাম, কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল বদরুল আলমকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। নিহত টোকন আলীর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।