লরি চাপায় চোখের সামনে মেয়ের মৃত্যু, বাবার আত্মহননের চেষ্টা

মোটরসাইকেলে চড়ে বাবার সঙ্গে ফাতেমা জাহান কলেজে যাচ্ছিলেন। ফৌজদারহাট–বাইজিদ লিংক রোডের তিন নম্বর সেতু এলাকায় আসতেই মোটরসাইকেলটি কাদামাটিতে পিছলে যায়। তাৎক্ষণিক ছিটকে সড়কে পড়েন ফাতেমা। মুহূর্তে দ্রুতগতির একটি লরি তাঁকে চাপা দিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই বাবার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে ফাতেমা মারা যান।

নগরীর এনায়েতবাজার মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন ফাতেমা। গতকাল শনিবার দুপুরে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটের ফৌজদারবাড়ির বাড়ি থেকে বাবার সঙ্গে কলেজে যাওয়ার পথে প্রাণ হারান তিনি।

আচমকা মেয়েকে হারিয়ে বাবা মোহাম্মদ ফারুক বিধ্বস্ত, দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চোখের সামনে মেয়েকে ছটফট করতে করতে মরতে দেখে উদভ্রান্তের মতো আচরণ করতে থাকেন ফারুক। দুর্ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া অনেকেই তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। নিজেও হাতে পায়ে আঘাত পেয়েছেন ফারুক। মেয়ের মরদেহের চারপাশে পাগলের মতো পায়চারি করতে থাকেন আর আর্তনাদ করে বলেন, ‘মা, মা, তোকে তো হারাই ফেললাম। কী নিয়ে বাঁচব। তোর মাকে কী বলব। তো মা জানলে তো বাঁচবে না।’

একপর্যায়ে নিজের মোটরসাইকেলটির দিকে দৌড়ে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বলে ওঠেন, ‘আমি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলব। এটা আর চোখে দেখতে চাই না।’ আশপাশের মানুষ তাঁর পথ আগলে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধা সরিয়ে কয়েকবার চেষ্টা করেন সড়ক দিয়ে যাওয়া অন্য গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার। অবশ্য পুলিশ ও স্বজনেরা দ্রুত তাঁকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেন।

খাড়াভাবে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা ফৌজদারহাট–বাইজিদ লিংক রোডে প্রায়ই ঝুরঝুরে মাটি পড়ে। এ কারণে কখনো কখনো সড়কটি বন্ধও রাখা হয়। এখন সড়কটি চালু থাকলেও বৃষ্টি পড়ায় কাদা হয়ে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃষ্টির কারণে কাদামাটিতে জমে পিচ্ছিল হয়ে গেছে সড়কটি। এ কারণে মোটরসাইকেলটি দুর্ঘটনায় পড়ে। আর তখনই পেছন দিক থেকে আসা লরিটি চাপা দিয়ে চলে যায়। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, লরিটি পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ায় মোটরসাইকেলটি ছিটকে পড়ে।

এ ব্যাপারে ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ তৌহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফাতেমাদের বাড়ি ফৌজদারহাট ফৌজদারবাড়ীতে। তিনি প্রতিদিন বাবার সঙ্গ কলেজে যাওয়া–আসা করতেন। কাদামাটির কারণে সড়ক পিচ্ছিল হওয়ায় মোটরসাইকেল পড়ে গেলে ছিটকে পড়েন ফাতেমা। পরে লরি চাপা দেয় তাঁকে। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ফাতেমা।’

এনায়েতবাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তহুরিন সবুর ডালিয়া গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এখনো বিষয়টি জানতে পারিনি। আজ দ্বাদশ শ্রেণির প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ছিল। বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নিতেই হয়তো ওই ছাত্রী কলেজে আসছিল।’

Scroll to Top