আজ অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রত্যাশিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই ভোটকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রথম পরীক্ষায় কীভাবে উতরাবে সবাই সেটি দেখার অপেক্ষায়।
সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণে বর্তমান কমিশনের জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা কুমিল্লার ভোটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ভোট সুষ্ঠু করতে ইসিও ব্যাপক তৎপর। যদিও স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নির্বাচনি এলাকা ছাড়তে ইসির ভূমিকা নিয়ে কারোর কারোর প্রশ্ন রয়েছে। কুমিল্লার ভোটে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। এদিকে কুমিল্লা সিটির ভোট নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোটাররা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সদ্য সাবেক মেয়র বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল ইসলাম সাক্কুর হ্যাটট্রিক বিজয় হবে, না কি প্রথমবারেই জয়ের মুকুট আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের নিশ্চিত হবে—তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আজ বুধবার ভোটের ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত। এদিকে কুমিল্লা সিটির ভোটের সঙ্গে আজ পাঁচটি পৌরসভা, চারটি উপজেলা পরিষদ এবং দেড় শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদের ভোটও অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।
নির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্র দখল কিংবা পেশিশক্তির ব্যবহারসহ কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা সহিংসতা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ সহস্রাধিক সদস্য। গতকাল কুমিল্লা জিলা স্কুলের শহীদ আবু জাহিদ মিলনায়তন থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম বিতরণ করা হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথমবার পুরোপুরি ইভিএমে ও দ্বিতীয় নির্বাচন আংশিক কেন্দ্র ইভিএমের মাধ্যমে হলেও এবার ১০৫টি কেন্দ্রের সবকটিতে ইভিএমে হবে ভোটগ্রহণ।
মেয়র পদে প্রার্থী যারা :
এবার কুমিল্লা নির্বাচনে পাঁচ জন মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), টানা দুই বারের সদ্য সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)। এদের মধ্যে প্রথম তিন প্রার্থী বেশ আলোচিত। এছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ১০৮ জন প্রার্থী।
দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ-বিএনপি :দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী দিলেও নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। স্বতন্ত্রভাবে বিএনপির দুই জন প্রার্থী নির্বাচন করছেন। কুমিল্লা সিটির ভোট নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটাররা। আওয়ামী লীগের বড় অংশ দলীয় প্রার্থী রিফাতের পক্ষেই। কেননা স্থানীয় এমপি বাহাউদ্দিন ও প্রয়াত প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের অনুসারীরা সবসময়ে কুমিল্লার রাজনীতিতে দুই মেরুতে। এখানে নৌকার প্রার্থী রিফাত এমপির বাহাউদ্দিনের অনুসারী হওয়ায় আফজলপন্থিরা ভোটের মাঠে তেমনটা নেই। বিগত দুটি সিটি নির্বাচনে আফজল খান ও তার মেয়ে সীমা প্রার্থী হলেও বাহার অনুসারী বিরোধিতা করে সাক্কুর পক্ষে অবস্থান নেন। তবে এবার পরিস্থিতি ঠিক উলটো। আফজলপন্থিরা গোপনে সাক্কুর পক্ষে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন ভোটাররাই। অন্যদিকে বিএনপির ভোটাররাও সাক্কুর পক্ষে নেই। একটি অংশ সাক্কুর সঙ্গে আরেকটি অংশ কায়সারের হয়ে কাজ করছেন। নির্বাচনকে ঘিরে টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্টর হবেন তরুণ ভোটাররা। তরুণ ভোটাররা প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অতীত কর্মকাণ্ড দেখে ভোট দেবেন বলে জানান নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
সাক্কুর হ্যাট্রিক, না কি রিফাতের প্রথম : এখনো পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে হারেননি মনিরুল হক সাক্কু। হ্যাট্রিক বিজয়ের প্রত্যাশা করছেন তিনি। সুষ্ঠু ভোট হলে এবারও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মনিরুল হক সাক্কু। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবারই প্রথম এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটিই তার প্রথম নির্বাচন। রিফাত বলেন, প্রথমবার নির্বাচন করছি। জনগণ আমার পক্ষে রায় দেবেন। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র : তৃতীয় বারের মতো এবার হচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট। ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এ সিটির মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। হিজড়া ভোটার দুজন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট হবে। ভোট কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮৯টি অতিঝুঁকিপূর্ণ, ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ও সাতটি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে মেয়র প্রার্থী কায়সারের শঙ্কা : নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি বলেন, ইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের যে আশার কথা শুনিয়েছিলেন তা ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে।