রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকায় আম পরিবহনের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে চলতি মৌসুমেও ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেন চালু করতে যাচ্ছে । তবে এই ট্রেনের সূচি চূড়ান্ত হয়নি এখনো।
কেবলই আমের মৌসুম শুরু হয়েছে। কবে নাগাদ আম পরিবহন শুরু করলে চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য ফলপ্রসূ হবে, তা জানতে বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী শুক্রবার (২০ মে)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, কৃষি কর্মকর্তা, আম চাষি ও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সমন্বিতভাবে মতামত দেবেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালুর তারিখ চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে বলছে, সারা দেশে আমের জন্য প্রসিদ্ধ রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এখানে আমের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। সাধারণত রাজশাহীর আম একটু আগেভাগে ওঠে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম একটু দেরিতে।
আর রাজশাহীর বাজারে মাত্রই নেমেছে গুটি জাতের টকমিষ্টি আম। জাতআম খ্যাত গোপালভোগ নামবে ২৫ মে থেকে। এরপর এক এক করে বাজারে নামবে বাহারি নাম ও জাতের আম। তাই এখনই নয়, আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ভরা মৌসুমেই গেল বছরের ধারাবাহিকতায় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু করতে চায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে।
পশ্চিমাঞ্চল রেল সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে প্রতি কেজি আম পরিবহনের ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে এক টাকা ৩০ পয়সা। আর রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৩৪৩ কিলোমিটার পথের জন্য প্রতি কেজি আমে ভাড়া দিতে হবে এক টাকা ১৭ পয়সা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালুর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এর দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। বাজারে এখন গুটিজাতের আম ছাড়া অন্য কোনো আম নেই। এই গুটি আম পরিবহন তাদের লক্ষ্য নয়। স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে তারা ভরা মৌসুমে ভালো মানের আম এখান থেকে পরিবহন করতে চান। এজন্য আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলেওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালুর দিনক্ষণ ঠিক করতে আগামী শুক্রবার (২০ মে) চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে সমন্বয় সভার আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালানোর জন্য সুনির্দিষ্টভাবে দিন-তারিখ প্রস্তাব করা হবে। সেই তারিখ রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এরপর রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। দিন ঠিক হলে মন্ত্রী নিজেই উপস্থিত থেকে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধন করবেন। আপাতত এমনটাই কথা হয়েছে। এজন্য ২৫ থেকে ৩১ মে সম্ভাব্য তারিখ প্রস্তাবনায় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক।
এদিকে, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু হলে এটি রহনপুর-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাবে। আবার ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে রহনপুর আসবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এই বিশেষ ট্রেনে প্রতি বছরের মতো এবারও খুব কম খরচে আম ছাড়াও টাটকা শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফলমূল ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যাবে।
ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছেড়ে যাবে এবং ঢাকায় রাত ২টার দিকে পৌঁছাবে। এক্ষেত্রে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকার বাজারগুলোতে তরতাজা সতেজ আম পৌঁছানো সম্ভব হবে। দীর্ঘ যানজট ও উঁচু-নিচু জায়গা না থাকায় আমেরও কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
গতবারের সিডিউল অনুযায়ী, প্রতিদিন দুপুর ২টায় রহনপুর থেকে ছেড়ে রাত ১টায় আমবাহী ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছায়। আবার রাত ২টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে রহনপুরে পৌঁছায় বেলা ১১টায়।
এর আগে রাজশাহী থেকে কম খরচে ও কম সময়ে রাজধানী ঢাকায় আম পৌঁছাতে গত বছর ২৫ মে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হয়। মোট পাঁচটি ওয়াগনে ঢাকায় যায় রাজশাহী অঞ্চলের আম। প্রতি বগির ক্যারিং ক্যাপাসিটি ৪৩ মেট্রিক টন হলেও আম বহন করা হয় ৩০ মেট্রিক টন। তবে কেবল আম নয়, আমের সঙ্গে শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফলমূলও পরিবহন করা হয়।