জাকির হোসেন (৪১) ‘জিনের বাদশা’ সাজতেন নিজেই। এরপর ‘বদজিন ভর’ করেছে তাদের ওপর বলে মানুষদের ভয় দেখাতেন। পাশাপাশি গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়েছেন কয়েকজনকে। ভুক্তভোগীদের ভয় আরো বাড়াতে কথিত জিনের বাদশা বলতেন- আপনার সন্তানদের বাঁচাতে হলে ‘বদজিনদের মাটির হাঁড়িতে বন্দি’ করতে হবে। সেটা না হলে বদজিন তাদের মেরে ফেলবে।
এমনভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জাকির হোসেন নামের ওই জিনের বাদশাকে আটক করেছে র্যাবের সদস্যরা। গত শনিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপরে র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জাকিরকে শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর থেকে আটক করা হয়েছে। আটকের আগ পর্যন্ত ভুক্তভোগীরাও জানতো তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জে। পরে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি- প্রতারক জাকির বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়া বাকপুর গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে।
মেজর সাকিব আরো জানান, প্রতারক জাকির মানুষের ফাঁদে ফেলে ও লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকার বেশি। তিনি জিনের বাদশা সেজে ‘বদজিন মাটির হাঁড়িতে’ বন্দি করে প্রতারণা করতেন। সেই টাকায় গোপনে বরিশালের গ্রামের বাড়িতে পাঁচতলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। আর দুই/একজনকে একইভাবে ফাঁদে ফেলতে পারলেই সে নারায়ণগঞ্জ থেকে লাপাত্তা হয়ে যেতেন। কারণ ভুক্তভোগীরা সকলেই জানে সে নারায়ণঞ্জের বাসিন্দা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনের কাছ থেকেই ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন জাকির। ওই দুজনের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়।
তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগীদের একজন নারী, তিনি সন্তানদের নিয়ে ভাড়া থাকেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জের পাইনাআদি নতুন মহল্লা আবাসিক এলাকায়। আরেকজন ওই নারীর ভগ্নিপতি, তিনি থাকেন কচুয়ায়। এ দুজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাকিরকে আমরা আটক করেছি। এরই মধ্যে ৪১ বছর বয়সী জাকির ওই নারীর ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে জিনের ভয় দেখিয়ে কোনো প্রকার কাবিন ও স্বাক্ষী ছাড়াই গোপনে কথিত বিয়ে করেছেন। ভুক্তভোগীদের বাড়ি কচুয়া হওয়ায়, ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকির জানান, সে একটি অন্ধকার কক্ষ ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করে তাঁর নিজের উপর জিনের বাদশা ভর করেছে বলে প্রচার করতেন। এরপর মাটির হাঁড়িতে বদজিন বন্দি করার নাটক করতেন। অষ্টম শ্রেণি পাস জাকির ১৯৯৫ সালে ঢাকা এসে দীর্ঘ ৭ বছর বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করে। এরপর বিআরটিএ ও পাসপোর্ট অফিসে দালালের কাজ করতেন তিনি। পাশাপাশি চোরাই মোবাইলের কারবারও করতেন ঢাকার মুগদার একটি বাসায় থেকে। ২০১৫ সালে চাঁদপুরের হাইমচরের বিয়ে করেন তিনি। ২০২০ সালে করোনা মহামারী শুরু হলে তার সকল ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সস্তায় সাবলেট বাসা নেন নারায়ণগঞ্জে। বিভিন্ন বই পড়ে এবং মাজারের ফকিরদের দেখে জিন ও ঝাড়ফুঁক সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা নিয়ে জাকির নিজেই জিনের বাদশা সাজে।