সোহরাব হোসাইন চৌধুরী (২৩) নামে বিজিবির এক সিপাহী নিজের কাছে থাকা বন্দুকের গুলিতে নিজেকেই শেষ করে দিয়েছেন। গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ময়মনসিংহের খাগডহর এলাকার ৩৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। সোহরাব হোসাইন চৌধুরী ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার বাশপাদুয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ছেলে।
গতকাল শনিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ। তিনি জানান, ঘটনার খবর পেয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ওই বিজিবি সদস্যের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে নিজের জীবনের নানা বিষয় নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সোহরাব। ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সোহরাব হোসাইন চৌধুরী নামের ফেসবুক আইডিতে লেখা হয়,
‘মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম নিয়ে ভালো কিছু আশা করা মহাপাপ। নামে সরকারি চাকরি কিন্তু বেতনটা ওই নামের ওপরই। ৭ বছর চাকরি, এখনও বাড়িতে গেলে ঠিক মতো একটু কোথাও যাওয়া হয় না, ছুটির সময়টাও চোরের মতো থাকতে হয়। গত কিছুদিন আগে আম্মু খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো মায়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেলাম। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মায়ের জন্য ওষুধ কিনবো সে টাকা আর হাতে নেই। পরে মামার কাছ থেকে ধার নিয়ে মাকে কিছু ওষুধ আর গাড়ি ভাড়া দিলাম।’
‘এমনটা প্রতিমাসেই হতে থাকে। না পারি নিজের খুশি মতো একটা জিনিস কিনতে কিংবা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভালো কিছু খেতে। না পারি পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে। তার মধ্যে বর্তমান বাজারের যা পরিস্থিতি এতে বাজার করা কিংবা সংসার চালানো কতটা কঠিন বুঝানোর মতো না।’
‘ছোট ভাইটা শারীরিকভাবে কিছুটা অক্ষম। তার জন্য কিছু করবো তার সুযোগ হয়নি এই জীবনে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ প্রশ্ন করে বিয়ে করি না কেন। কিন্তু মানুষকে তো আমার সরকারি চাকরির ভেতরটা দেখাতে পারি না। আমার বেতন আমার সুযোগ-সুবিধা সেভিংস; এসব কিছুতে অন্য একটা মানুষকে আনা আমার জন্য \’মরার উপর খাড়ার ঘা\’। তাই বিয়ে-শাদীর চিন্তা করিও না। শুধু খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারলে খুশি- এমন চাইলাম তা-ও আর হয়ে ওঠলো না। ৭টা বছর মানসিক যন্ত্রণা আর অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে সত্যি বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। এইবার একটু রেস্ট দরকার।’