বরিশালের বাবুগঞ্জে দুই দিন ধরে ঢাকঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাঁজিয়ে কথিত সাপে কাটা এক তরুণীর চিকিৎসা করছিলেন এক কবিরাজ ও তার দল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পালিয়ে যায় কবিরাজ দল।
তবে কথিত চিকিৎসার আগে তরুণীর বাবার কাছ থেকে নেওয়া চুক্তির ৩৭ হাজার টাকা ফেরত দেননি তারা।
বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ অসুস্থ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বাড়ি ফিরেন তিনি।
কথিত কবিরাজ মো. আলী আকবর হোসেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার দলের সদস্যরা হলেন দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের মো. তফেল, মো. হাফিজুল, মো. বাপ্পি, মো. হানিফ ও মো. শাজাহান।
স্থানীয়রা জানান, রোববার (৬ জুন) রাতে ওই তরুণীকে সাপ বা বিষাক্ত কোনো পোকা কামড় দেয়। এতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়লে তাকে ওই রাতেই কালকিনিতে কবিরাজ আলী আকবর হোসেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ঝাড়ফুঁক শেষে আবার বাড়ি ফিরে মঙ্গলবার (৮ জুন) ওই তরুণী ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওইদিন কবিরাজ মো. আলী আকবরকে খবর দিয়ে ওই বাড়িতে নিয়ে আসেন তরুণীর স্বজনরা। কবিরাজ ও তার দল এসে বাড়ির উঠানে সামিয়ানা টাঙিয়ে কলাগাছ পুতে মোমবাতি, আগরবাতি ও ধূপ জ্বালিয়ে তরুণীকে ঘেরাও দেওয়া সীমানার মধ্যে একটি চেয়ারে বসিয়ে ‘আধ্যাত্মিক’ চিকিৎসা শুরু করেন। একইসঙ্গে ঢাকঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন্ত্র পড়ে তরুণীকে ঝাঁড়ফুঁক দিতে থাকেন কবিরাজ। মঙ্গলবার গড়িয়ে বুধবার (৯ জুন) পর্যন্ত চলে ঝাড়ফুঁক। খবর পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেক বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কবিরাজ ও তার দল পালিয়ে যায়।
তরুণীর স্বজনরা জানান, ওই তরুনীকে আধ্যাত্মিক চিকিৎসা দেয়ার কথা বলে ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন কবিরাজ। ৩৭ হাজার টাকা চুক্তিতে ৬ সদস্যের কবিরাজ দলের খাওয়া-থাকা রোগীর অভিভাবক বহন করবে বলে চুক্তি হয়। এই সময়ে ডেকোরেশন সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও তাদের বহন করা কথা ছিলো। ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে রোগীকে সুস্থ্য করে তোলার গ্যারান্টি দেন কবিরাজ।
তরুণীর বাবা জানান, ওই কবিরাজের চিকিৎসায় সাপেকাটা অনেক রোগী ভালো হয়েছে। এই বিশ্বাসে তিনি ওই কবিরাজের সঙ্গে ৩৭ হাজার টাকায় চুক্তি করে আগাম টাকা পরিশোধ করেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত কবিরাজের চিকিৎসায় তার মেয়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। পুলিশ আসার খবরে কবিরাজ পালিয়ে যাওয়ার পর বুধবার রাতে তাকে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে তাকে বাড়ি নিয়ে যান।
জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, সাপেকাটা রোগীর চিকিৎসার নামে ভণ্ডামি চলছিল। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি পুলিশ নিয়ে ওই বাড়ি গেলে, কবিরাজ ও তার দল পালিয়ে যায়।
আগরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মহিদুল আলম বলেন, ওই কবিরাজকে ধরার জন্য স্থানীয়দের কাছে পুলিশের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। তাকে পাওয়া মাত্র আটক করা হবে।