দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল ভোলার জেলেরা। মৎস্য ঘাটে জাল, নৌকা ও ট্রলারের ইঞ্জিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করছেন তারা।
অভাব অনটনের মধ্যে বেকার সময় কাটানোর পর কোনা বাধা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে তারা নদীতে মাছ ধরতে যাবেন, তাই হাসি ফুটেছে তাদের চোখ-মুখে। জেলে পাড়াতেও যেন উৎসবের আমেজ। মাছ বিক্রির টাকায় মহাজনের দাদন আর ধার-দেনা পরিশোধ করার চিন্তাও করছেন জেলেরা। এতে করে সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে মনে করছেন বেশিরভাগ জেলে।
ভোলা সদরের তুলাতলী, ইলিশা ও ভোলার খালসহ কয়েকটি মাছ ঘাটগুলো দেখা গেছে, মেঘনা পাড়ে জেলেদের জাল বুনছেন। অন্যদিকে কেউ ট্রলারে রং দিচ্ছেন। কেউ বা নতুন করে নৌকা তৈরি এবং পুরাতন নৌকা মেরামত করছেন। মাছ ধরতে যাবেন এমন প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।
এমনি এক জেলে আবু কালাম বলেন, দুই মাস নদীতে মাছ ধরতে যাইনি, বেকার বসে ছিলাম। এ কয়েকদিনে ৩০ হাজার টাকা দেনা হয়েছি। এখন মাছ ধরার শুরু হবে, তাই জাল বুনছি। নদীতে যাবো, ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে দেনা পরিশোধ করবো।
একই কথা জানান শিবপুর এলাকার জেলে জাফর মাঝি, জুয়েল মাছি, খোকন মাল ও মহিউদ্দিনসহ অন্যরা।
তারা জানান, একদিকে করোনা, অন্যদিকে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের, কোনো কাজ ছিল না। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তবে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এখন আবার মাছ ধরায় কর্মব্যস্ত হয়ে পড়বেন তারা। সেই সঙ্গে সংকট কাটানোর চেষ্টা করবেন।
জেলেরা জানান, ইলিশের অভয়াশ্রমে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছ শিকার বন্ধ ছিল। জেলেরা অপেক্ষায় ছিলেন কখন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আর কখন তারা নদীতে নামবেন। অবশেষ সেই প্রতিক্ষার পালা শেষ করে শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে ইলিশ ধরা।
তাই আগে থেকেই ঘাটে ঘাটে চলছে প্রস্তুতি। কেউ জাল নৌকা তৈরি করছেন, কেউবা পুরোনো নৌকা মেরামত আর ধোয়া-মোছার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। নৌকার ইঞ্জিনসহ মাছ ধরার যাবতীয় সরঞ্জাম ঠিক করে রাখছেন জেলেরা। এবার নদীতে নেমে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ পেলেই ধার-দেনা পরিশোধ করবেন এমন আশা তাদের।
জাফর মাঝি বলেন, দুই মাস নদীতে যেতে পারিনি। এখন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়ে পুরাতন নৌকা মেরামত করছি, নদীতে যাবো, মাছ পেলে সেই টাকা দিয়ে দেনা পরিশোধ করবো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ না পেলে আবারো সংকটে পড়তে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইলিশ নিষেধাজ্ঞা সময়ে নিবন্ধিত জেলেরা চাল পেলেও যাদের নিবন্ধন নেই, তারা চাল পায়নি। এ জন্য জেলেদের ধান-দেনা করে দু’মাস কাটাতে হয়েছে। আর তাই কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে তাদের। ৩০ এপ্রিল থেকে মাছ ধরা শুরু এমন খবর আগে থেকেই জানেন জেলেরা। তাই ব্যস্ততায় মধ্যেই আছেন তারা। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মৎস্যঘাটে জেলে, পাইকার ও আড়ৎদারদের হাক-ডাকে সরগরম হয়ে উঠবে, ইলিশ ধরায় সেই চির চেনা দৃশ্য মিলবে ঘাটগুলোতেও।
ভোলার খাল মৎস্য ঘাটের আড়ৎদার আ. মান্নান জানান, জেলেরা নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মাছ ধরার শুরু হলে জেলেদের পাশাপাশি মৎস্য আড়ৎদাররাও লাভের মুখ দেখতে পাবেন। জমে উঠবে ঘাট।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল হয়েছে, তাই এবার মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছি।
এদিকে দুই মাসের ক্ষতি পুষিয়ে ইলিশ উৎসবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন এমন স্বপ্ন দেখছেন উপকূলের জেলেরা।