বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভা মেয়র হাজী আব্দুস সালামের বাসায় বিস্ফোরণের ঘটনায় মেয়রের স্ত্রী কানন বেগম (৩৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন।
আজ শনিবার (১০ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ১টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল।
তিনি জানান, গত ৬ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ওই রাতেই একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়া দেওয়া হয়। বাকি ১১ জনকে ভর্তি রাখা হয়। এদের মধ্যে কানন বেগমের শরীরে ৬০ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাকে ওই রাতেই আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সর্বশেষ আজ শনিবার দুপুরে তার মৃত্যু হলো।
ঘটনার দিন চিকিৎসাধীন দগ্ধ পান্না হালদার (৫০) জানান, তিনি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার সেকশনে কাজ করেন। তার বাসা সদরেই। অফিসিয়াল কাজে তিনি ওইদিন সন্ধ্যায় মেয়রের বাসায় গিয়েছিলেন। এ সময় আরও ৪-৫ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, অফিস স্টাফ ও কর্মীরাও ছিলেন। তখনই ৪তলা বাসাটির ৪তলাতে হঠাৎ বিকট আওয়াজে বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে রুমের ভেতরে থাকা তারা সবাই কমবেশি দগ্ধ হন।
ওইদিন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি মীরকাদিম পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার আওলাদ হোনের বলেন, মীরকাদিম পৌরসভার সাবেক মেয়র শরিফুল ইসলাম শাহিন। রাতের অন্ধকারে পৌরসভার কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) মনির হোসন একটি খাতা নিয়ে এই সাবেক মেয়রের কাছে যাচ্ছিল। এ সময় আমাদের বর্তমান কমিশনার দ্বীন ইসলাম সাহেব খাতা আটকায়।
তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে কেনো খাতা নিয়ে যাচ্ছো। পরে পৌরসভাতে খাতা রাখে সে। এরপর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের খবর দেয় দ্বীন ইসলাম। আমি প্যানেল মেয়র এক আব্দুর রহিম বাসারকে নিয়ে পৌরসভায় আসি। সেখানে গিয়ে বলি এই খাতা পৌরভাতে রাখলে চুরি হতে পারে, আমরা বর্তমান মেয়র সাহেবের বাসায় নিয়ে যাব। পরে মেয়রের বাসায় এই খাতা নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বাসায় গিয়ে মেয়রের সঙ্গে (হাজী আব্দুস সালাম) কথা বলি। বুধবার (৭ এপ্রিল) আমাদের পৌরসভার স্টাফ নির্বাচন। মেয়র সাহেব বলেন খাতাগুলো কালকে দেখব না। কাল নির্বাচন শেষে পরশুদিন খাতা দেখব। খাতার ভেতরে কী আছে তখন দেখব। এ সময় কেয়ারটেকারের সঙ্গে রাতে খাতা নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় আমাদের কথা-কাটাকাটি হয়।
পরে আমরা বলি মেয়র সাহেব যা করার করবেন। সবাই চুপ হয়ে যায়। মেয়র সাহেব আমাদের আপ্পায়ন করছিলেন, ফল খেতে দিছিলেন। এই মুহূর্তে বিকট শব্দ হয়। ঘরের ভেতরে আগুন চলে আসে। আমরা যে যেভাবে পারি পালিয়েছি। সেকেন্ডের মধ্যে সমস্ত ফ্লোর আগুনে ঝলসে যায়। সবার পা পুড়েছে এ কারণে। এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
দগ্ধ বাকিরা হলেন ২নং ওয়ার্ডের কমিশনার ও প্যানেল মেয়র আওলাদ হোসেন (৪০), ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার হাজী দ্বীন ইসলাম (৬০), পৌরসভার সচিব সিদ্দিকুর রহমান (৩৮), মেয়রের পিএস যুবলীগ কর্মী মো. তাজুল ইসলাম (২৬), মো. হোসেন কালু (৫০), আমিন আহ মাইনুদ্দিন (৪৫), পৌরসভা অফিসের নিরাপত্তা কর্মী মো. মনির হোসেন (৪৮), নৈশ্যপ্রহরী শ্যামল চন্দ্র দাস (৪৫), মেয়রের কর্মী মোশারফ হোসেন (৪০)।
এই ঘটনায় মেয়র হাজী আব্দুস সালামের ও তার বড় ছেলে আল হাসেম পাপ্পু (৩০) হালকা আহত হয়েছিল। এ ছাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেল এবং ১ প্যানেল মেয়র ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রহিম বাদশা আহত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
এই ঘটনায় পৌরসভার অফিসের নিরাপত্তা কর্মী মো. মনির হোসেন (৪৮) ২০ শতাংশ দগ্ধ ও মেয়রের কর্মী মোশারফ হোসেন (৪০) ৮ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছে।