সুফিয়া বেগমের বয়স ৬৫ বছর। তার বাড়ি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের হরিষা গ্রামে। চোখের সমস্যা দেখা দেয়ায় চিকিৎসার জন্য যান ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে।
সেখানে পরীক্ষা করানোর পর ডান চোখের ব্লক ধরা পড়ে। ব্যবস্থাপত্র হিসেবে নেয়া হয় অপারেশনের সিদ্ধান্ত। ৬ মার্চ তার অপারেশন করানো হয়। তবে ওই দিন ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করেন ডাক্তার।
এই বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগী রোগী আপত্তি জানালেও ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান। রোগীসহ স্বজনরা ওই ভুল চিকিৎসার প্রতিবাদ করায় তারা জানান ওই চিকিৎসকের অপারেশনটি ভুল নয়। হাসপাতালের ল্যাব টেস্টের রিপোর্টে ভুলবশত বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে। এ কারণেই বাম চোখের অপারেশন করা হয়েছে। এতে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হলে। পরে ভুল চিকিৎসার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরবর্তীতে ১৬ মার্চ বিনা পয়সায় ডানের চোখের অপারেশনটি করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী রোগী সুফিয়া বেগম বলেন, অনেক দিন ধরে আমার ডান চোখে সমস্যা ছিল। পরীক্ষাতেও তাই ধরা পড়ে। কিন্তু ডাক্তার আমার বাম চোখের অপারেশন করেছেন। পরে আবার ডান চোখের অপারেশন করে দিয়েছে।
সুফিয়া বেগমের ছেলে জজ মিয়া বলেন, আমি আমার মাকে নিয়ে ৬ মার্চ ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে যাই। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেন ডান চোখে ব্লক আছে। অপারেশন করতে হবে বলে জানান। মার অপারেশন করার অনুমতি দেই আমি। অপারেশন শেষে দেখি আমার মার বাম চোখ অপারেশন করা হয়েছে। বিষয়টি ডাক্তারকে জানালে তিনি বলেন, পরীক্ষায় আপনার মার বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে। এটি কেন হলো এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি। তিনি আরও বলেন, ১০দিন পর ১৬ মার্চ আবার হাসপাতালে মার চোখের সেলাই কাটতে যাই। ওই দিন ডাক্তার আবার আমার মার ডান চোখের অপারেশন করতে হবে বলে জানান। তখন ডাক্তার বিনা পয়সায় আমার মার ডান চোখের অপারেশনটি করে দেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান সাদিয়া বলেন, টেস্ট রিপোর্টে ডান চোখেই ব্লক দেখানো হয়েছে। এরপরেও ডাক্তার বাম চোখ অপারেশন করেছেন। এখন তার ভুল ধামাচাপা দিতে আমার ও রিপোর্টের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।
ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান বলেন, আমি রোগী ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করি এবং অপারেশনের জন্য বলি। তবে ল্যাব টেকনিশিয়ান ভুলবশত ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখে ব্লক দেখিয়ে রিপোর্ট করেন। এ কারণে আমি ডান চোখের পরিবর্তে আমি বাম চোখের অপারেশনটি করে ফেলি। এর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করেছেন।
হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ভুলবশত ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখ অপারেশন করা হয়েছিল। পরে পরিবারের সাথে কথা বলে রোগীর ডান চোখ অপারেশন করে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়েছে।
এই বিষয়ে নিয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. শাহবুদ্দিন খান বলেন, অতিদ্রুতই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।