বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল লক্ষ্মীপুরে একটি ব্যতিক্রমী নৌকা বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ইউছুফ নামে এক কারিগর। তার বানানো নৌকাটি শুধু জলে নয়, চলবে স্থলেও।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নৌকাটি বানিয়েছেন ওই যুবক। উদ্যমী এ যুবক নৌকাটি উপহার দিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। নৌকাটির নাম রেখেছেন— জল-ডাঙা মুজিব পরিবহন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে আগামী ১৭ মার্চ সড়ক পথে যাত্রী নিয়ে রামগতির চর কলাকোপা গ্রাম থেকে উভচর নৌকা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন ইউছুফ।
ভালোবাসা থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে এ নৌকা নিজ হাতে নির্মাণ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ইউছুফ জানান, তিন বছর ধরে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ নৌকা নির্মাণ করেছেন তিনি।
উভচর এ নৌকা দেখতে ভিড় করছেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। ২৪ সিটের এ পরিবহনে রয়েছে বাসের মতো স্টিয়ারিং, আবার পানিতে চলার জন্য দুটো পাখা। নৌকাটি যাত্রীসহ চালিয়ে ঢাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চান কারিগর মো. ইউছুফ। প্রধানমন্ত্রীকে নিজের নৌকায় চড়াতে চান তিনি। প্রধানমন্ত্রী অন্তত পক্ষে একবার হলেও এ নৌকা ছুঁয়ে দেখবেন বলে আশা করছেন ইউছুফ।
চার চাকা বিশিষ্ট নৌকাটি জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙ দিয়ে সাজানো। আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও আঁকা রয়েছে। এ নৌকায় ওঠার জন্য উড়োজাহাজের আদলে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে গিয়ার, ফলোক্যামেরা, হেডলাইট, ইন্ডিকেটর, এসি ফ্যান, হর্ন এবং মিটার বোর্ডও রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের ছাউনিও রয়েছে। প্রতিদিনই ব্যতিক্রম উভচর পরিবহনটি দেখতে ভিড় করছেন উৎসুকরা।
ইউছুফ লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের পূর্ব চর কলাকোপা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।
ইউসুফের বাবা আবুল কালাম বলেন, ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরপোড়াগাছা গুচ্ছগ্রামে আসেন। ওইদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার বাবা মাটি কেটে ওই স্থানে কিল্লা স্থাপনে সহযোগী ছিলেন। বাবার মুখে বঙ্গবন্ধুর ও আওয়ামী লীগের কথা শুনে অনুপ্রাণিত হন কালাম। এতে তার মনে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়। ছেলে ইউছুফও বাবা ও দাদার মতো একইভাবে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন।
নৌকার কারিগর মো. ইউছুফ জানান, জল-ডাঙা মুজিব পরিবহনটি বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালোবাসার প্রতীক। তিনি নিজেই ৩ বছর ধরে এ নৌকা বানিয়েছেন। সোমবার (১৫ মার্চ) নিজ গ্রাম চর কলাকোপা গ্রামে এটি উদ্বোধন করা হবে। ১৭ মার্চ সড়ক পথে প্রধানমন্ত্রীকে উপহারটি বুঝিয়ে দিতে তিনি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। তার প্রবল ইচ্ছে প্রধানমন্ত্রী তার নৌকায় চড়বেন অথবা অন্তত একবার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখবেন।
মো. ইউছুফ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য নৌকাটি নির্মাণে আমি ইচ্ছা পোষণ করি। এতে আমার বাবা আবুল কালাম প্রথম ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আমাকে অনুপ্রেরণা দেন। স্থানীয় মো. করিম ও আলাউদ্দিনও আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এ কাজে আমার স্ত্রীও সার্বক্ষণিক আমার সঙ্গে ছিলেন।
এ ব্যাপারে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন বলেন, ইউছুফ আমার কাছে এসেছে। নৌকার ছবি দেখিয়েছে। আগামী ১৬ তারিখে নৌকাটি আমি জেলা প্রশাসক মহাদয়কে দেখাব। নৌকাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর উপযোগী হলে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।