রহিমার প্রেমের টানে মাতৃভূমি ছেড়ে প্রায় চার বছর ধরে যশোরের কেশবপুরে বসবাস করছেন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস হোগল। নিজেকে খাঁটি বাঙালি হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তিনি। করছেন কৃষিকাজও।
ক্রিস হোগল এখন মোহাম্মদ আইউব নামে পরিচিত। কেশবপুরের মেহেরপুর গ্রামের রহিমা খাতুনের সাথে তার এক যুগের সংসার। তবে মেহেরপুর গ্রামে তারা চার বছর ধরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। জীবনের শেষ পর্যন্ত রহিমা খাতুনের সাথেই থাকতে চাই’।
ক্রিস হোগল আমেরিকা থেকে তার মা ও প্রথম স্ত্রীর সন্তানদেরও এখানে নিয়ে আসতে চান। সেজন্য মেহেরপুর গ্রামের একটি বাড়িও তৈরি করছেন।
মহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা আরশাদ আলী মোড়ল জানান, বিদেশি এই মানুষটি এখানে বিয়ে করে অনেকদিন ধরে বসবাস করছেন। ১০/১২ বিঘা ফসলি জমি কিনে সেখানে ধান চাষ করেন। নিজে ক্ষেত থেকে ধান কেটে ভ্যানে উঠিয়ে বাড়িতে নেন। তার বাঙালি হয়ে ওঠার এ দৃশ্য গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই অবলোকন করেন। ভালোবাসার টানে কীভাবে একটা মানুষ এতোটা পরিবর্তিত হতে পারে, তা দেখে গ্রামের মানুষ বিস্মিত হন।
ক্রিস হোগল জানান, তার বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। তিনি একজন পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। ভারতের মুম্বাই শহরে থাকার সময় সেখানে রহিমা খাতুনের সাথে তার দেখা হয়। সেখানে তিনি অনিল আম্বানির রিলায়েন্স ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড কোম্পানিতে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন। মুম্বাইতে রহিমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাদের সম্পর্ক তৈরি হয় এবং একসময় তা ভালোবাসায় রূপ নেয়। এরপর তারা দাম্পত্যজীবনে প্রবেশ করেন।
রহিমা খাতুন বলেন, অভাবের তাড়নায় শৈশবে বাবা আবুল খাঁ ও মা নেছারুল নেছার হাত ধরে তিনি ভারতে পাড়ি জমান। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বাবা শ্রম দিতেন একেক দিন একেক জায়গায়। বারাসাতের এক বস্তিতে একা থাকতেন রহিমা। চৌদ্দ বছর বয়সেই বাবা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। তিনটি সন্তান হয় তার। এরপর স্বামী তাকে ফেলে নিরুদ্দেশ হন।
জীবীকার সন্ধানে রহিমা খাতুন চলে যান মুম্বাই শহরে। সেখানকার এক বস্তিতে পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তি খুপরিতে ঠাঁই হয় তার। একদিন সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের রাস্তায় ক্রিস হোগলের সাথে পরিচয় হয়। হোগল তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। হিন্দিতে দু’এক লাইন কথা হয় তাদের মধ্যে। আবারও দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। এভাবে ছয় মাস চলার পর তারা রেজিস্ট্রি করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের তিন বছর পর ক্রিস হোগল তাকে চীনে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচ বছর কাটিয়ে দু’জনেই ফিরে আসেন বাংলাদেশে। মেহেরপুর গ্রামে বাবার ভিটায় বসবাস শুরু করেন।
রহিমার মা নেছারুন নেছা এখনও জীবিত। রহিমার প্রথম স্বামীর তিনটি সন্তান তার সাথেই থাকে। এরকম একটি পরিবার পেয়ে খুবই খুশি ক্রিস হোগল। তিনি বলেন, ‘আমার জন্মস্থান আমেরিকার মিশিগান খুব সুন্দর শহর। অনেক আগেই আমার প্রথম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। মিশিগানে মা ও ছেলে, মেয়ে থাকে। মেহেরপুরে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হলে মা ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আসবো।’
তিনি বলেন, কর্মসূত্রে বহুদেশ ঘুরেছি। বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি, ধানক্ষেত, সরিষা ফুলের হলুদ রং বারবার আমাকে বিমোহিত কর। এই দেশে অনেক ভালো মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। চারবছর আছি। বাকি জীবনও এখানে কাটাতে চাই। এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য পোশাক কারখানা করা ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে তার।