লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় সড়কের পাশে উন্মুক্ত পরিবেশে তামাকের পাতা ও ডাটা গুঁড়া করায় হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। ইতোমধ্যে গ্রামটির অনেক শিশু ও বৃদ্ধ সর্দ্দি এবং শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের তালুক বানিনগর জানেরপাড় গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন ধান শুকানোর চাতাল। গত এক মাস ধরে সড়কের পাশে সেই চাতালে ধানের পরিবর্তে গুঁড়া করা হচ্ছে বিষবৃক্ষ তামাক পাতা। সড়কের পাশে উন্মুক্ত স্থানে তামাক পাতা গুঁড়া করায় তামাকের বিষাক্ত শিষা বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে। পথচারীরা নাক মুখ ঢেকে সেখান দিয়ে চলাচল করেছেন। ওই চাতালের পাশ্ববর্তী মানুষও ঘরে থাকতে পারছেন না। পাশে থাকায় মায়ের দোয়া ডেইরি ফার্মে পাঁচ হাজার সোনালী মুরগির খামারে মড়ক দেখা দিয়েছে। দৈনিক ৮-১০টি মুরগি শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছে।
একই অবস্থা পাশের একটি মৎস্য খামারেও। তামাকের বিষাক্ত শিষা বাতাসে মিশে পুকুরের পানিতে মিশে মাছ মরতে শুরু করেছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ দিয়েও মাছ রক্ষা করতে পারছেন না গ্রামটি মৎস্য খামারি মনসুর আলী।
গ্রামটির যুব উদ্যোক্তা মায়ের দোয়া ডেইরি ফার্মের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, পাঁচ হাজার সোনালী মুরগির এ বিশাল ফার্মটি আমারসহ কয়েকজনের সংসার সচল রেখেছে। ফার্মের পাশে তামাক পাতা গুঁড়া করায় দৈনিক ৮-১০টি মুরগি শ্বাসকষ্টে মারা যাচ্ছে। তাকে নিষেধ করেও কোনো ফল হয়নি। উল্টো মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে মেশিন মালিক হাফিজুল।
মৎস্য খামারি মনসুর আলী বলেন, দুই বিঘা জমির ওপর মৎস্য খামার তৈরি করেছি। পাশের চাতালে তামাক পাতার গুঁড়া বাতাসের সঙ্গে মিশে তা পুকুরে পড়ে পানি দূষিত করছে। এতে মাছ মরে যাচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
তালুক বানিনগর ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কের পাশে ও উন্মুক্ত পরিবেশে তামাক পাতা গুঁড়া করায় গ্রামটিতে প্রবেশ করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অনেক বার নিষেধ করা হলেও অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে মেশিন চালাচ্ছে হাফিজুল। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
শনিবার (৩ অক্টোবর) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়ক সংলগ্ন একটি টিনসেট ঘরে মেশিন মালিক হাফিজুলের ছেলে লিমন মিয়া ধানের পরিবর্তে তামাকের পাতা ও ডাটা গুঁড়া করছেন। এর ফলে গ্রামটিতে থাকা তো দূরের কথা সড়কটি দিয়ে চলাচল করারও সুযোগ নেই। তামাকের দুর্গন্ধে শ্বাস নিতেও কষ্ট হয় পথচারীদের। ভিতরের চাতালের উঠানে কয়েকজন নারী শ্রমিক তামাকের গুঁড়া তৈরির কাজ করছেন। উন্মুক্ত উঠানে তামাকের গুঁড়ো নেটিং করায় তা বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষিত করছে। মেশিন চালক লিমন মিয়া জানান, এসব তামাকের গুঁড়া রংপুরের হারাগাছে বিক্রি করা হয়।
মেশিন মালিক হাফিজুলের স্ত্রী লুনা পারভীন বলেন, ধানের ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। তাই আমাদের চাতালে আমরা তামাক পাতা গুঁড়া করছি। তাতে অন্যের কি?। তবে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। প্রয়োজন হলে ছাড়পত্র নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল হাসান বলেন, উন্মুক্ত স্থানে বা খোলামেলা পরিবেশ তামাক পাতা গুঁড়ো করার নিয়ম নেই। কেউ করে থাকলে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।