নড়াইলে বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলো ছেলে!

এই পৃথিবীতে সন্তান নামের অনেক অসন্তান রয়েছে যারা মায়ের মর্ম বুঝেনা। নড়াইলে মায়া রাণী কুন্ডু (৮৫) নামে এক বৃদ্ধা বিধবা গত ১২দিন যাবত চিত্রানদীর পাড়ে রাখা নৌকার নিচে আশ্রয় নেয়ার পর শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল শহরের কুরিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মৃত কালিপদ কুন্ডুর স্ত্রী মায়া রাণী কুন্ডুকে দেড় বছর আগে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তারই সন্তান দেব কুন্ডু। বৃদ্ধা মা বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থানের পর সর্বশেষ গত ১২ দিন চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান কমপ্লেক্স সংলগ্ন চিত্রা নদীর পাড়ে রাখা শিল্পী সুলতানের নৌকার নীচে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানবেতর জীবনযাপন করেন। স্থানীয় লোকজন তাকে যে খাবার দেন তাই দিয়ে চলে তার আহার।

বিষয়টি শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরার নির্দেশে জেলা প্রশাসনের লোকজন তাকে নৌকার নিচে থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করে।

সূত্রে আরো জানা যায়, নড়াইল শহরের কুরিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মৃত কালিপদ কুন্ডুর দুই পুত্র দেব কুন্ডু (৫০) ও উত্তম কুন্ডু (৪০)। উত্তম কুন্ডু বিবাহের পর কয়েক বছর আগে থেকে অন্যত্র বসবাস করায় শহরের রূপগঞ্জ বাজারের বাঁধাঘাট এলাকার ব্যবসায়ী দেব কুমার তার মা মায়া রাণী কুন্ডুকে দেখাশোনা করছিলেন। বিগত দেড় বছরের বেশী সময় ধরে দেব তার মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করেন এবং খেতে-পরতে ও থাকতে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এ ঘটনার পর অমিত সাহা নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বৃদ্ধা মায়া রাণী কুন্ডুকে কয়েক মাস তার নিজের বাড়িতে রেখে ভরণ-পোষনের ব্যবস্থা করেন।

বৃদ্ধা মায়া রাণী কুন্ডু কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় ছেলে ও ছেলের বৌ তাকে খেতে-পরতে ও থাকতে দেয় না। তার ৫ শতকের একটি জায়গা ছিল। ওই জায়গা কয়েক লাখ টাকায় বিক্রি করেছে বড় ছেলে দেব কুমার। এখন তারা দুর্ব্যবহার করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে বের করে দেবার পর কিছু দিন বিভিন্ন জায়গায় ছিলাম। পরে চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের নৌকার নিচে থাকা শুরু করি। এখানে থেকে আশেপাশের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার খেয়ে আসি।

এ ব্যাপারে মায়া রাণীর ছেলে দেব কুন্ডু বলেন, তার বৌ এর সাথে মার বনিবনা না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, বৃদ্ধা মায়া রাণী কুন্ডুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃদ্ধাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা যদি রাজি না হয় তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধার ভরণ-পোষনের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Scroll to Top