কুয়াকাটায় পর্যটকদের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে পরিত্যক্ত ব্লক ও কংক্রিট

শান্ত সমুদ্র, একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত উপভোগের জন্য খ্যাত সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। প্রকৃতির নৈসর্গিক ছোঁয়া পেতে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা এখন হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত। পর্যটকদের মন কাড়তে এখানে আরও রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কুয়া, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, আড়াই শতবর্ষী নৌকা, ইলিশ পার্ক, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, ঝাউ বন, লেম্বুর চর, চর গঙ্গামতি, লাল কাঁকড়ার দ্বীপ, ফাতরার বন, এশিয়ার সর্ববৃহৎ সীমা বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন পল্লী ও রাখাইন মার্কেটসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট।

দুর দুরান্ত থেকে আগত পর্যটকরা জানান, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সৈকতে যেখানে সেখানে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত ব্লক, কংক্রিট, ইট, সুরকি ও গাছের গুঁড়ি এখন পর্যটকদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। জোয়ারের সময় সমুদ্রে গোসলে নামলে পর্যটকরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হন। এসব ব্লক ও কংক্রিট এখন সৈকতে ওঠা-নামার সম্মুখভাগ জিরো পয়েন্টসহ প্রায় ১০০ মিটার বেলাভূমিতে দৃশ্যমান। এর রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও পৌরসভার এগুলো অপসারণ করার কথা। অথচ তারা দেখেও না দেখার ভান করছে। ঝুঁকিপূর্ণ জোনটিতে কোনো সতর্কতামূলক বা নির্দেশনামূলক চিহ্ন না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা।

পর্যবেক্ষন করে দেখা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রচণ্ড ঢেউয়ে সৈকতের প্রচুর বালি ক্ষয় হয়। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ঢেউয়ের তাণ্ডবে উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। গাছ অপসারণ হলেও গুড়িগুলো যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি বালির ওপর জেগে ওঠে পরিত্যক্ত ব্লক, কংক্রিট, ইট, সুরকি ও গাছের গুড়ি। যার কারণে পর্যটকদের চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের নভেম্বরে সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে কুয়াকাটা সৈকতের প্রবেশদ্বারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে বায়োগ্যাস প্লান্ট কাম রেস্ট হাউজ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। পরে এলজিইডি ওই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেয়। ভবনটির বেশকিছু ভাঙা অংশ সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যার ফলে সৈকতে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে হাঁটাচলা করতে পারছে না।

স্থানীয় সৈকত ফটোগ্রাফার রুবেল জানান, পর্যটকদের এমন বিড়ম্বনা থেকে নিস্তার দিতে তারা নিজেদের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোয় বাঁশ পুঁতে লাল কাপড় টানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে বাঁশ ও লাল কাপড় এখন আর নেই। সুদুর থেকে আগত পর্যটক ফারজানা বলেন, পাঁচদিনের ট্যুরে এসে সৈকতে গোসল করতে গিয়ে কংক্রিটের ধারালো অংশে আঘাত লেগে তার ডান পা কেটে গেছে। এবং আহত হয়ে ওইদিনই পরিবারের কাছে ফিরতে হয়েছে তাকে। তবে পর্যটকদের কথা বিবেচনায় রেখেই কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সেক্রেটারি জেনারেল মো. আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, সৈকতের সম্মুখভাগে পড়ে থাকা কংক্রিট খণ্ডগুলো প্রমাণ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন পর্যটকবান্ধব নয়। জোয়ারের সময় সমুদ্রে গোসল করতে নেমে প্রতিদিনই কোনো না কোনো পর্যটক আহত হচ্ছেন। এছাড়া যেখানে সেখানে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত ব্লক, কংক্রিট, ইট, সুরকি ও গাছের গুড়ি সৈকতের সৌন্দর্যও নষ্ট করছে। তিনি এগুলোর দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

কুয়াকাটার পৌর মেয়র জনাব আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, অনাতিবিলম্বে সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কংক্রিট খণ্ডগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। গত বছর আমরা কিছু ভাঙা অংশ অপসারণ করেছিলাম, চলতি বছর আবারো বালির নিচের চাপা পড়া কংক্রিট ও ব্লক প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে ক্ষয়ে বেলাভূমিতে আবার জেগে ওঠেছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের চলতি দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক বদরুল কবির বলেন, সৈকতের সম্মুখভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ওই স্থানে পর্যটকদের নামতে নিরুৎসাহিত করলেও পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, পরিত্যক্ত ব্লক, কংক্রিট, ইট, সুরকি অপসারণের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, পর্যটকদের সমস্যা নিরসনে পড়ে থাকা ওইসব কংক্রিট ও ব্লক পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঙ্গে কথা বলে অচিরেই অপসারণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Scroll to Top