গুজবে পাগল বাঙ্গালি। একটি টিউবওয়েল থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি বের হচ্ছে গত চারদিন ধরে। ওই পানি পান করলেই মিলবে রোগমুক্তি, ভালো হবে দুরারোগ্য ব্যধি ক্যান্সারসহ নানা ধরনের জটিল ও কঠিন রোগ! এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরই দূর-দূরান্ত থেকে পানি নিতে শতশত মানুষ ভিড় করছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আনারুলের বাড়িতে।
গত চারদিন ধরে তাঁর বাড়ির একটি টিউবওয়েলে কোন বৈদ্যুতিক মটর বা হাতের চাপ ছাড়াই পানি উঠছে। তবে এ পানি পান করে কারো রোগমুক্তি হয়েছে কিনা কেউ বলতে পারেনি। এটিকে পুঁজি করে ব্যবসার ফন্দি করছে একটি চক্র। তবে প্রশাসন বলছে যদি কেউ প্রতারণা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ভবানীপুর গ্রামের আনোরুল ফকিরের বাড়ির টিউবওয়েল দিয়ে হঠাৎ পানি উঠতে থাকে। এলাকার লোকজন এটিতে \’আল্লাহর নেয়ামত\’ মনে করে এবং এর পানি পান করলে রোগমুক্তি হবে ভেবে পানি নেওয়া শুরু করেন। অনেকেই রোগমুক্তির প্রচারণা চালানোর পর ভবানীপুর ও আশেপাশের এলাকার লোকজন পানি নিতে ভিড় জমায়। কেউ আসছেন গোপন রোগ ভালো করার নিয়তে। আবার অনেকেই আসছেন ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে। বিশেষ করে বিকেল থেকে পানি নেওয়ার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষের ভিড়। কেউ বা পানি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ ওখানে নিয়ত করেই পানি পান করছেন। পানি নিতে আসা কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের গরুড়া গ্রামের মহিদুল জানান, তার এবং তার ছোট ভাইয়ের গোপন রোগ মুক্তির জন্য পানি নিতে এসেছেন। বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিয়েও তা ভালো হয়নি।
ভবানীপুরের হাবিবুর জানান, চোখে কম দেখেন তিনি। ওই পানি দিয়ে চোখ পরিস্কার করলে ভাল হবে, মনে করে খাস নিয়তে তিনি পানি নিয়ে যাচ্ছেন। তবে কাউকে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না। গোয়াল গ্রামের বৃদ্ধ চম্পা এসেছেন তার মেয়ের সন্তান লাভের আশায়। বিয়ের ১০ বছর পার হলেও তার মেয়ের কোনো সন্তান নেই।
এদিকে একটি চক্র ওই টিউবওয়েলটিকে ঘিরে ব্যবসার ফন্দি করছে। অনেকেই এটিকে অলৌকিক বলে দাবি করে মানুষকে উৎসাহিত করছে। কেউ কেউ নতুন করে রাস্তা তৈরির কাজে ব্যস্ত। তাদের দাবি, পানি পান করলে রোগ ভালো হবে। পানির অপর নাম জীবন। অনেকের রোগ ভালো হয়েছে বলে দাবি করলেও কোনো লোককে দেখাতে পারেনি তারা।
কুঞ্জনগর গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম রমজান আলী জানান, এসব কুসংস্কার। রোগব্যধি থেকে মুক্তি লাভের জন্য জন্য মানুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেবেন। পানি পান করলে কোনো রোগ ভালো হয় কিনা সেটি তার অজানা। ঝাড়ফুক দিয়ে মনের দ্বিধা দূর করানো যায় কিন্তু দেহের রোগ নয়।
উপজেলা গণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, আমরা ঘটনাটি জেনেছি। এটির সঙ্গে বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। নলকূপের পানিতে রোগমুক্তি হয় এমন তথ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে নেই। যারা পানি নিচ্ছে বা পান করছে তারা গুজবে কান দিয়ে সেখানে ভিড় করছে বলেই আমরা মনে করি।
গাংনী থানার ওসি ওবাইদুর রহমান জানান, ওই স্থানে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য নজরদারীতে রাখা হয়েছে। পুলিশ ক্যাম্পে জানানো হয়েছে ও সতর্ক করা হয়েছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, ওই টিউবয়েলের পানিতে রোগ সারাবে কিভাবে তা বোধগম্য নয়। এটি প্রতারণার ফাঁদ মাত্র। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে পাঠানো হবে এবং টিউবয়েলটিকে বন্ধ করে দেওয়া হবে।