ময়মনসিংহ বিভাগঃ নেত্রকোনায় এতিমদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে যথাযথ সরকারি নির্দেশনা না মেনে এতিমখানার শিক্ষক ও কমিটির লোকজন আত্মসাত করছে। জেলার মদন উপজেলার অন্তত ৬টি এতিমখানার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯/২০ অর্থ বছরে চলতি জানুয়ারী/জুন মাস পর্যন্ত ৬ এতিমখানা মাদ্রাসায় ১৮৫ জন এতিমের নামে ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এতিমখানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর যৌথ স্বাক্ষরে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলণ করেছে। ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বাবদ প্রত্যেক এতিম মাথা পিছু মাসিক বরাদ্দকৃত ২ হাজার টাকা হতে খাদ্য বাবদ ১৬০০ টাকা, পোষাক বাবদ ২০০ টাকা, ঔষধ ও অন্যান্য ২০০ টাকা ব্যয় করার শর্ত রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বরাদ্ধ খরচের ব্যাপারে সরকারি কোন নিয়ম নীতি মানছেন না শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বরাটি-মোয়াটি-আকাশ্রী হাজী ওয়াহেদ আলী এতিমখানা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা, তালুকখানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা, আলমশ্রী দারুসুন্নাহ কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, পাছআলমশ্রী এতিমখানা মাদ্রাসা ও বাশরী মমতাজ উদ্দিন এতিমখানায় এতিমের সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কাগজে কলমে এতিম দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয় করছে সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান, বাশরী মমতাজ উদ্দিন, পাছআলমশ্রী, আলমশ্রী দারুসুন্নাহ কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, তালুকখানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা মাদ্রাসার এতিমরা গ্রামের লোকজনের বাড়িতে লজিং থাকে। এতিমদের খাবারের বরাদ্দকৃত টাকা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ভাগাভাগি করে খায়। সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোঁটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানায়। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এতিমখানাগুলোতে। এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর কিছু প্রতিষ্ঠান ভুয়া এতিমের তালিকা দেখিয়ে বিভিন্ন এতিমখানার ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা এতিমের বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পরিদর্শন না করেই অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। ফলে প্রকৃত এতিমরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তালুকখানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা মাদ্রাসার সভাপতি রফিকুজ্জামান জানান, আমাদের এতিম খানায় ২০/২২ জন এতিম আছে সবাইকে আমরা ভরণপোষণ করি। আমার ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করি। অথচ এ মাদ্রাসায় ৩৩ এতিমের নামে বরাদ্দ এসেছে।
বিনুনা হাসান এতিমখানা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সুয়েল মান্নান সুবিধাভোগী এতিমদের তালিকা সর্ম্পকে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। অথচ উক্ত মাদ্রাসা থেকে ২৭ জন এতিম সুবিধা পাচ্ছে। সরজমিনে ৫ জন এতিম উপস্থিত পাওয়া যায়।
বরাটি-মোয়াটি- আকাশ্রী হাজী ওয়াহেদ আলী এতিমখানা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক আব্দুসাত্তার জানান, আমরা ৭০ জন এতিমের ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলণ করে গত ৬ মাসে ব্যয় করেছি।
বাশরী মমতাজ উদ্দিন এতিমখানা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার ছেলে সেলিম আহমেদ জানান, আমার প্রতিষ্ঠানের ১৭ জন বরাদ্দ পেয়েছে। এ টাকা উত্তোলন করতে ট্রেজারিসহ বিভিন্ন অফিসে উৎকুচ দিতে হয়। এই টাকা থেকে শিক্ষকদের বেতন দেই যা আমার হাত থেকেও অতিরিক্ত গুনতে হয়। ফলে যথানিয়মে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শাহ জামান উদ্দিন আহমেদ জানান, এ অর্থের বরাদ্দ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি নতুন যোগদান করেছি। তবে এ ব্যাপারে কোন সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে সরজমিন পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এতিমদের টাকা আত্মসাৎ এর ব্যাপারে অভিযোগ পেলে কোন ছাড় নেই। জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক আলাল উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেলে আমি নিজেই পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব।