টানা দেড় মাস পর বন্যার পানি কমছে

ভয়ঙ্কর আঁকার ধারণ করেছিলো এবারের বন্যা পরিস্থিতি। টানা প্রায় দেড় মাস পর দেশের সব কটি নদ–নদী থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যার পানি এরই মধ্যে ২২টি জেলা থেকে নেমে গেছে। তবে এখনো ১১টি জেলার নদ–নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব জেলা থেকেও পানি পুরোপুরি নেমে যেতে পারে। গতকাল রোববার সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে দেওয়া পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় বন্যার পানি দ্রুত নামছে। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের বেশির ভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। অন্যদিকে পদ্মাতীরের জেলা মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকেও পানি দ্রুত নামছে।

রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীগুলোর পানি আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে নেমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। তবে রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের নিচু এলাকায় ঢুকে পড়া বন্যার পানি নামতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে, গত ২৭ জুন ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এরপর পাঁচ দফা বন্যার পানি চার-পাঁচ দিনের জন্য কমলেও তা বিপৎসীমার নিচে যায়নি।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশের কোথাও আর নতুন করে বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি বাড়তে পারে। তবে তা থেকে বন্যার আশঙ্কা নেই। কারণ দেশের বন্যার প্রধান উৎস হচ্ছে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের উজানের এলাকাগুলো। সেখান থেকে আসা ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও বরাক নদীর উজানে এক সপ্তাহ ধরে তেমন বৃষ্টি হচ্ছে না। মূলত দেশের বন্যার পানির ৯৩ শতাংশ আসে উজান থেকে, অভিন্ন নদীগুলো দিয়ে।

এ ব্যাপারে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আপাতত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে সাধারণত সেপ্টেম্বরের দিকে দেশে আরেক দফা বন্যা হয়ে থাকে। এবারও তা হবে কি না, এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় পানিবন্দী মানুষের সংখ্যাও আস্তে আস্তে কমে আসছে। প্রতিদিন এক থেকে দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কে ও আশ্রয়কেন্দ্রে যারা অবস্থান করছিল, তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সময় নদীভাঙন ও পানিবাহিত নানা রোগ প্রকট হয়। এ কারণে বন্যার্ত মানুষ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময় তাদের পর্যাপ্ত পুনর্বাসন ও পরিচ্ছন্নতা উপকরণ দেওয়া দরকার। যেসব এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে, সেখানে জরিপ করে ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
:প্রথম আলো

Scroll to Top