ঘূর্ণিঝড় আম্পান: মোংলায় সকাল থেকেই বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া

সুপার সাইক্লোন আম্ফান আঘাত হানার আশঙ্কায় মোংলা বন্দরে আজ বুধবার ভোরে আবহাওয়া অধিদপ্তর ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করেছে। একই সঙ্গে বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়েছে। ভোর থেকেই অঝোরধারায় বৃষ্টি ও মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দীন জানান, সোমবার রাত থেকেই মোংলা বন্দরে অবস্থানরত ক্লিংকার (সিমেন্টের কাঁচামাল), কয়লাসহ ১১টি বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ জারির পর বন্দরের অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে সকল প্রকার নৌযান চলাচলও বন্ধ করা হয়।
বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য বোঝাই করার জন্য যেসব লাইটার জাহাজ নদীতে আছে, সেগুলোকেও নিরাপদে নোঙর করতে বলা হয়েছে। মোংলা বন্দরের চ্যানেলে অবস্থানরত সব নৌযানকে নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য নদীতে মাইকিং করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে তিনটি উদ্ধারকারী নৌযান। বন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে তাঁদের সবাইকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের বড় জাহাজগুলো বন্দর চ্যানেলে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারির পর থেকে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তবে অনেকে করোনা আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন। উপজেলা ও পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং করে জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোংলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন দাবি করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মঙ্গলবার রাতেই শুকনা খাবার যেমন চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, আখের গুড় এবং সাহ্‌রির জন্য খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে মোমবাতি ও দেশলাইও।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত মান্নান জানান, উপজেলার ১০৩টি বিদ্যালয় কাম আশ্রয়কেন্দ্রে ধারণক্ষমতা প্রায় ৫৭ হাজার। ইতিমধ্যে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, জনপ্রতিনিধি ও সিপিপিসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবকসহ দুই হাজার কর্মী মঙ্গলবার রাত থেকেই তাঁদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন।
ইউএনও আরও জানান, মোংলা উপজেলা এখনো করোনামুক্ত। মঙ্গলবার রাতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে জনগণকে যত দূর সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ থেকে ইতিমধ্যে ২৪ টন চাল, শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ হাজার টাকা এবং শিশু খাবার সংগ্রহের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বনপ্রহরীদের ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি নিয়ে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে এবং সুন্দরবনের অভ্যন্তরে যেসব জেলে আছেন, তাঁদের সোমবার সন্ধ্যা থেকে নৌকা ট্রলারসহ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
Scroll to Top