করোনাভাইরাসের কারণে মাদারীপুরে চার উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়মিত চেম্বারে বসছেন না চিকিৎসকেরা। ক্লিনিক মালিকেরা বলছেন, স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কারণে চিকিৎসকেরা বসছেন না। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে জ্বর, ঠান্ডা ও কাশির কোন চিকিৎসা দিচ্ছে না জরুরি বিভাগ। এতে রোগীরা যেমন বিপাকে পরছেন, তেমনি আতংকিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
মাদারীপুর নিরাময় হাসপাতালে গত রবিবার বিকেলে এক চিকিৎসক শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি আসেননি। এতে প্রায় শতাধিক রোগীর স্বজন চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গেছেন। চেম্বারে কোনো ডাক্তার আসেননি। চৌধুরী হাসপাতালে এর আগে প্রায় ৭-৮ জন ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখতেন। কিন্তু সেখানে একজন চিকিৎসক ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে এরই মধ্যে শিবচর উপজেলা লকডাউন করলেও কার্যত পুরো জেলা জুড়েই মানুষ এখন ঘরবন্দি। ফলে চিকিৎসার মতো মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা দিন কাটাচ্ছে মাদারীপুরবাসী।
মাদারীপুর জেলা শহরের কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে জানা যায়, অসুস্থ্য শিশু, বৃদ্ধসহ রোগীরা অপেক্ষা করছে ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু ডাক্তার চেম্বার না করার বিপাকে পরেছেন তারা। জেলার ছোট-বড় ১০৬টি ক্লিনিক ও ডায়গনস্ট্রিক সেন্টারে নিয়মিত যেসব ডাক্তার রোগী দেখতেন তারা আর চেম্বার করছেন না। এমনকি কোন কোন ডাক্তার জেলা ছেড়ে চলে গেছেন অন্য কোথাও। এ খবরটি ছড়িয়ে পরেছে জেলার সর্বস্তরে। এতে আতংকিত হয়ে পরেছে মানুষ। ডাক্তার দেখাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অসুস্থ্য রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা করাবেন ভেবে পাচ্ছেন না তারা।
হৃদয় নামে একজন রোগীর আত্মীয় বলেন, ‘আমি সেই ৩টার সময় এসেছি, এখনো ডাক্তার আসেনি। হাসপাতালে জানতে চাইলে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ বলেনি যে তারা আসবে না। তবে রাত হয়ে আসলে সিরিয়াল লেখা একজন জানায় ডাক্তার আসবে না, সে ছুটি নিয়েছে।’
জরুরি বিষয় ছাড়া ডাক্তারের কাছে না যাওয়ার পরামর্শ মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা সির্ভিল সার্জন মো. শফিকুল ইসলামের। তিনি জানান, ফোনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে। খুব বেশি অসুস্থ্য হলে সরকারী হাসপাতালগুলোতে আসতে পারে, তবে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একজন ডাক্তারকে একদিন পর পর ডিউটি দেয়া হচ্ছে। আর প্রাইভেট ক্লিনিক মালিকদের সাথে আলোচনা করে ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক করার কথা বলবো। তারপরেও যদি কেউ না রাখে তাহলে কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সরকারি যারা ডাক্তার আছেন, তারা নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে আমরা জানতে পেরেছি প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন না। প্রাইভেট হাসপাতালের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে ডাক্তাররা নিজেদের সেফটি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেবেন।