বাসায় আটকে দেহব্যবসা, কান্না শুনে ২ নারীকে উদ্ধার

চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার থানার কাপাসগোলার একটি বাসায় দুই নারীকে আটকে রেখে দেহব্যবসায় বাধ্য করছিলেন তিনজন। হঠাৎ নারীর কান্না শুনতে পেয়ে দুই নারীকে উদ্ধার করে জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফেরা মুসল্লিরা। সেই সঙ্গে ওই তিনজনকেও ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। কিন্তু পুলিশ শুক্রবার রাতে খদ্দেরসহ দুই ভুক্তভোগী নারীকে অভিযুক্ত করে গতকাল সকালে আদালতে তুললেও বাকি দুজনকে ছেড়ে দেয়। তবে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আল ইমরান খানের বিচক্ষণতায় শেষ রক্ষা হয়নি তাদের।

কৌশলে আদালতে হাজির করে খদ্দেরসহ তিনজনকেই মানবপাচার আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে অভিযোগপত্র দেয়ার আদেশ দেন মহানগর হাকিম আল ইমরান খান। আর গ্রেপ্তার তিনজন হলো- দেহব্যবসা পরিচালনায় মূল অভিযুক্ত শেলী আক্তার (২৮) ও আবু কায়সার জাহাঙ্গীর বাবু (৩২) এবং খদ্দের মো. হৃদয় (১৮)।

আদালতে চকবাজার থানার জিআরও আনিসুর রহমান গতকাল বিকালে এই তথ্য জানান। তিনি জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বাসায় ফেরার পথে চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকার তাহেরা ফেরদৌস ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু মেয়ের চিৎকার-কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পান মুসল্লিরা।

এরপর তারা দ্বিতীয় তলার ওই বাসায় প্রবেশ করে দুই নারীকে উদ্ধার করার পাশাপাশি এক নারীসহ তিনজনকে ধরে চকবাজার থানা পুলিশকে খবর দেন।

চকবাজার থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকেই নিজেদের হেফাজতে নেয়। পরে দুই ভুক্তভোগী নারী ও খদ্দের হৃদয়কে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) অধ্যাদেশের ৭৬ ধারায় অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে অধর্তব্য অপরাধে প্রসিকিউশন দাখিল করে আদালতে পাঠানো হয়। থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠে মূল অপরাধী শেলী আক্তার ও জাহাঙ্গীর বাবুকে।

এর ফলে ভুক্তভোগী দুই নারী আইনি সুরক্ষা না পাওয়ার পাশাপাশি মূল অপরাধীরা রক্ষা পেতে যাচ্ছিলেন। তবে বিচারক আল ইমরান খানের বিচক্ষণতায় সেটি সম্ভব হয়নি। মামলাটি শুনানিতে নিয়ে তিনি ভুক্তভোগী দুই নারী ও খদ্দের হৃদয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা বের করে আনেন।

ভুক্তভোগী দুই নারী আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানায়, শেলী ও জাহাঙ্গীর বাবুসহ তাদের চক্রের অধীনে নগরীর চকবাজার, দুই নাম্বার গেইট ও খুলশী এলাকায় তিনটি বাসা আছে। এসব বাসায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের ফুসলিয়ে বা ফাঁদে ফেলে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদেরকে বন্দি রেখে, মারধর করে দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়।

আদালতকে ভুক্তভোগী নারীরা জানান, এসব বাসায় আসা খদ্দেররা প্রথমে ইয়াবা খেয়ে নেশাগ্রস্ত হয়। এরপর তাদের ওপর পাশবিক যৌন নির্যাতন চালায়। তারা ইয়াবা সেবনের পর নারীর সঙ্গে যৌন সমপর্ক করতে পারে বিধায় এসব চক্রের কাছে খদ্দের বেশি আসে।

পরে খদ্দের হৃদয়কে বিচারক আল ইমরান খান জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, ভুক্তভোগী দুই নারীর বক্তব্য সঠিক। শেলী ও জাহাঙ্গীর বাবু আদালত প্রাঙ্গণেই আছে। জরিমানার বিনিময়ে দুই ভুক্তভোগী নারী ছাড়া পেলে তাদেরকে আবার দেহব্যবসার জন্য জোর করে নিয়ে যাওয়া হবে।

তাদের বক্তব্য শোনা ও লেখার পর বিচারক আল ইমরান খান পুলিশকে নির্দেশ দেন শেলী ও জাহাঙ্গীর বাবুকে পাওয়া গেলে আদালতে হাজির করার জন্য। কিছুক্ষণ পর পুলিশ তাদের ধরে আদালতে হাজির করে। এরপর বিচারকের জিজ্ঞাসাবাদে তারা দেহব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগ স্বীকার করলেও কৌশলে অনেক বিষয় এড়িয়ে যায়।

সার্বিক বিষয় বিবেচনায় আদালত জানায়, জোর করে দেহব্যবসায় বাধ্য করিয়ে শেলী আক্তার, আবু কায়সার জাহাঙ্গীর বাবু ও মো. হৃদয় মানবপাচার আইনের ১২ ধারাসহ অন্যান্য অপরাধ করেছেন। এরপর উক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেয়ার পাশাপাশি দুই ভুক্তভোগী নারীকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিতে আদেশ দেন বিচারক আল ইমরান খান।

ঘটনার বিষয়ে মানবপাচার আইনে নতুন করে একটি মামলা রেকর্ড করার জন্য চকবাজার থানার ওসিকে নির্দেশ দেন বিচারক। সেই সঙ্গে মানবপাচার আইনে মামলা না করে ৭৬ ধারায় চালান দেয়ার বিষয়টি আদালত সন্তোষজনকভাবে বিবেচনা করেননি আদালত। ফলে, চকবাজার থানায় নতুন করে রেকর্ড করা মামলাটি তদন্তের জন্য উপযুক্ত কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে সিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

লেটেস্টবিডিনিউজ/এনপিবি

Scroll to Top