আজ পহেলা বৈশাখ। বঙ্গাব্দ ১৪২৯-এর প্রথম দিন। পাওয়া-না পাওয়ার জীবনের হালখাতার সব হিসাব চুকে দিয়ে, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আজ বাংলা নববর্ষে বাঙালি নতুনভাবে এগিয়ে যাবে।
‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুছে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ কবিগুরু এভাবেই আহবান জানিয়েছেন পুরনো গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরে নতুন উদ্দীপ্ততায় এগিয়ে যাওয়ার। কবিগুরু বলেছেন সব না পাওয়া, ব্যর্থতা, ব্যথা-বেদনা ও হাহাকারকে বিদায় জানিয়ে সাফল্য ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা। বিদায়ী বছরের সব ব্যর্থতা ভুলে নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার দীপ্ত প্রত্যয়ের প্রথম দিন আজ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন।
আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এর পরপরই সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করা হয়েছে রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগ’ মঙ্গললোকে’।
করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর আজ সাড়ম্বরে শুরু হলো পহেলা বৈশাখের উদ্যাপন। অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশ ঘিরে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে বাঙালির মহামলিনের এই দিনে দেশবাসীর সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতি কামনা করেছেন। বিদায়ী বছরের সব ব্যর্থতা পেছনে ফেলে জাতি আজ উদ্দীপ্ত হবে নতুন শপথে। রবিঠাকুরের অমিয় সুরের মূর্ছনা ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানটির মধ্য দিয়ে আজ দেশব্যাপী বৈশাখকে স্বাগত জানাবে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ মেতে উঠবে বৈশাখী ভালোলাগায়। তবে মাহে রমজান উপলক্ষে এবারের উদ্যাপনে অতটা জৌলুশ থাকবে না মনে করছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। পান্তা-ইলিশ, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা আর মন্ডা-মিঠাই দিয়ে জাতি আজ বৈশাখী ভালোবাসা বিনিময় করবে। তবে রমজানের কারণে সব আয়োজনের ব্যাপ্তিই থাকবে সীমিত। ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, চ্যানেল আই ও সুরের ধারা, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে নতুন বছর বরণ করছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাচ-গান, আবৃত্তিসহ থাকছে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন।
সাড়ে ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হবে অনুষদের শিক্ষার্থীদের তৈরি অনুষঙ্গ দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হয়ে ফের চারুকলায় এসে শেষ হবে। এ ছাড়া রবীন্দ্রসরোবার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শিল্পকলা একাডেমিসহ গোটা রাজধানীতেই থাকবে বৈশাখের নানা আয়োজন। গতকাল চৈত্রসংক্রান্তির মধ্য দিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়েছে সারা দেশ।
আজ সরকারি ছুটি। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক একে পৌরাণিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে আজ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় দৈনিকগুলোয় ক্রোড়পত্র প্রকাশ হয়েছে। বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হবে।