মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতাল ডেডিকেটেড হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য

মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতাল ডেডিকেটেড হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য
মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতাল - পুরোনো ছবি

মশা নিধনসহ নানা কার্যক্রমেই মধ্যেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এতদিন কয়েক শতক হলেও গতকাল তা হাজার ছাড়িয়েছে। এসব রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ৫৩টি হাসপাতাল ছাড়াও অন্যান্য বিভাগীয় হাসপাতালে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে প্রায় সব হাসপাতালে। ফলে মেঝে, বারান্দা ও বেলকুনিতে থেকে চিকিৎসা নিতে রোগীদের।

আজ বুধবার বেলা সোয়া ১২টায় কোভিডের মতই এবার ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করা হচ্ছে ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) হাসপাতাল। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উপপরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সেখানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হতে পারছে। কিন্তু ডেডিকেটেড করতে হলে লোকবল লাগবে। ডেডিকেটেড করতে ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। লোকবল নিয়োগ হলেই সেভাবে রোগী ভর্তি শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটিতে লজিস্টিক সাপোর্ট ভালো আছে। জনবল পেলে সেখানে ৮০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই চালু হবে। এ দিকে টানা চার দিন ধরে ডেঙ্গু সংক্রমণের রেকর্ডের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সাতজনের মৃত্যু দেখেছে দেশ।

গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বিগত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৫৪ ডেঙ্গু রোগী। চলতি বছরে একদিনে হাজার রোগী ভর্তি এটিই প্রথম। এ নিয়ে টানা চার দিন রেকর্ড সংক্রমণ ঘটল। বিগত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। এ ছাড়া চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা পুরো জুন মাসে মৃত্যুর পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে।।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ। তারা বলছেন, এখনো সরকারি-বেসরকারি বহু হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাচ্ছে না সরকার। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ ঢাকার বাসিন্দা। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগী দুই হাজার ৩০৬ জন এবং ৯৯৭ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য আরও বলছে, মোট রোগীর মধ্যে গত মাসে আক্রান্ত ছিল পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন, সেখানে চলতি জুলাইয়ের প্রথম ১১ দিনেই এ সংখ্যা সাত হাজার ছুঁই ছুঁই। এদিকে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর বছর ২০২২ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত যেখানে মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে এ বছর ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত একদিনেই মারা গেছেন সাতজন, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু। এর মধ্য দিয়ে জুনের মোট মৃত্যুকে ছাড়িয়ে গেছে জুলাই। অথচ মাসের এখনো দুই-তৃতীয়াংশ সময় বাকি।

ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ অবস্থা আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আগামী ‘আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে’ প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এ দিকে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে দেশে জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ।

ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু বিস্তারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিষদের আহ্বায়ক ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা উচিত। এ মুহূর্তে ওয়ার্ড পর্যায়ে এডিস মশা প্রজননবিরোধী প্রচার অভিযান চালাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে।’ একই সঙ্গে সবখানে ডেঙ্গু পরীক্ষা বিনামূল্যে করার দাবিও জানিয়েছেন এ জনস্বাস্থ্যবিদ।