ঈদে প্রতি বছরই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চাঁদাবাজির কারণে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয় বলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক দাবি করেছেন।
সেই সঙ্গে যাত্রী হয়রানী ও সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতে ২০ এপ্রিল একদিনের সরকারি ছুটি বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
প্রতি বছরই ঈদ যাত্রায় বহুমুখী সঙ্কটে পড়েন যাত্রীরা। এই সঙ্কটের শুরু হয় যানবাহনের টিকেট পাওয়াকে কেন্দ্র করে। চাহিদা বাড়ার সুযোগে টিকেটের দাম বাড়িয়ে দেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা।
আছে টিকেট কালোবাজারির অভিযোগ। নানা বাধা পেরিয়ে বাহন পেয়েও মেলে না স্বস্তি। সড়কে তীব্র যানজটে কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেখানেও আছে নানা পক্ষের চাঁদাবাজির অভিযোগ।
রোরবার (২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, এবার ঈদে সড়ক, নৌ আর রেল পথে প্রায় সোয়া মানুষ বাড়ি ফিরবে।
নির্বাচন পূর্ববর্তী বছর হওয়ায় এবারের ঈদে বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ঈদে বাড়ি যেতে পারে।
এতে ১৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহনে বাড়তি প্রায় ৯০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।
তিনি বলেন, ১৬ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও প্রধানত ১৮ এপ্রিল বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে।
কিন্তু গণপরিবহনে সড়কপথে ৬ থেকে ১০ লাখ, নৌপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, রেলপথে দেড় লাখ যাত্রী ওভারলোড হয়ে যাতায়াত করতে পারে।
কিন্তু ২০ এপ্রিল অফিস খোলা থাকায় এই ৫০ লাখ যাত্রীর একটি বড় অংশ আটকে যাচ্ছে। এই কারণে ২০ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রী চাপ কিছুটা কমতে পারে।
যাত্রাপথে বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা, প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি উল্লেখ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, এসব নিশ্চিত না হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।
সংগঠনটির মহাসচিব বলেন, যাত্রী চাপের কারণে লাভের আশায় ফিটনেসবিহীন গাড়িও নামে দূরের যাত্রায়। মহাসড়কে নামে নসিমন, করিমনসহ নানা রকম অবৈধ বাহন।
তিনি আরও বলেন, ঈদযাত্রায় রাজধানীতে তীব্র যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে ঘরমুখো মানুষ। তাই রাজধানীর সব সড়ক ঝঞ্জালমুক্ত করার দাবিও জানান তিনি।
সে সঙ্গে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা ও ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রার সুযোগ দিলে রাজধানীর পাঁচ থেকে ছয় লাখ বাইকার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারে। এতে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বহুলাংশে বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, ২০২২ সালে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত ৮৪৪ জন আহত হয়েছে।