হযরত শাহজালালে কেজি দরে বিক্রি হবে ১২ উড়োজাহাজ!

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বছরের পর বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ১২টি উড়োজাহাজ। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে এসব উড়োজাহাজের কার্যক্রম।

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) পরিত্যক্ত এসব উড়োজাহাজ সরিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কয়েক দফা চিঠি পাঠিয়েও কোনো সাড়া পায়নি। পরে নিলামের উদ্যোগ নেয় বেবিচক।

বেবিচক জানায়, সেই সময় কয়েকজন মালিক বকেয়া পরিশোধে জন্য ছয় মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন। এরপর আর তাদের কোনো সাড়া মেলেনি। ফলে বিমানবন্দরের রফতানি কার্গো-ভিলেজের অনেকটা জায়গাজুড়ে এসব পড়ে আছে।

পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, জিএমজি এয়ারলাইনসের একটি ও এভিয়েনা এয়ারলাইনসের একটি রয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানায়, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজের পার্কিং এবং সারচার্জ বাবদ পাওনা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জিএমজি এয়ারলাইনসের কাছে সর্বোচ্চ পাওনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বেবিচকের বকেয়া রয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। জিএমজির উড়োজাহাজগুলো ২০১২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে স্থগিত রয়েছে।

এদিকে ২০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে। এটি ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সংস্থাটি এর আগে থেকেই বেশ কয়েকটি রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এছাড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ বেবিচকের বকেয়া রয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। এদিকে পরিত্যক্ত প্লেনগুলো পড়ে থাকার জায়গায় কমপক্ষে ৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে একটা বিশাল পরিমাণ অর্থ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বেবিচক।

এদিকে এয়ারওয়েজগুলোর কোনো সাড়া না পেয়ে এবার উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবিচক। এসব বিক্রি করে অন্তত পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া টাকা আদায় করা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে নতুন করে পার্কিংয়ের জায়গাও পাওয়া যাবে। তবে নিলামে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাওয়া না গেলে উড়োজাহাজগুলো কেজি দরে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেবে বেবিচক।

বিমানগুলোর রেজিস্ট্রেশন আগেই বাতিল করেছে বেবিচক এমন তথ্য জানিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এয়ারওয়েজগুলোকে তাদের উড়োজাহাজ সরিয়ে নিতে বেশ কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সাড়া না পেয়ে গেল বছর উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির উদ্যোগও নেওয়া হয়। তখন বকেয়া পরিশোধে ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন কয়েকজন মালিক। পরে আর তারা যোগাযোগ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে ফের আলোচনা চলছে নিলামে তোলার।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে বার বার চিঠি দেওয়ার পরও তারা যোগাযোগ করেনি। এমনকি তাদের কাছে পাওনা অর্থও পরিশোধ করেনি। এবার সিভিল এভিয়েশন আইন অনুযায়ী এসব উড়োজাহাজ বাজেয়াপ্ত করে নিলামে তোলা হবে।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম নিলামের প্রস্তুতির নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, নিলামের যাবতীয় প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী আমরা ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়ার আগেই নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।