নতুন বছরকে বরণ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান, ফটকা ফোটানো এবং আতশবাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা নগরবাসী মানেনি। তারা নিষিদ্ধ ফটকা আর আতশবাজিতেই বর্ষবরণ করেছেন।
অনেকে বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসেছিল। তা বাস্তবায়নের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন কোনো জোরালো উদ্যোগ ছিল না। ফলে আইন অমান্য করার একটি মহোৎসব চলে নগরজুড়ে।
যদিও শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছিলেন, থার্টি ফার্স্টে উন্মুক্ত স্থানে কোনো আয়োজন করা যাবে না। কোথাও কোনো ডিজে পার্টি হবে না। কোথাও আতশবাজি-পটকা ফোটানো যাবে না, ফানুস ওড়ানো যাবে না। ফানুস উড়ালে প্রয়য়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলেও শনিবার রাত ১০টার পর থেকে চিত্র ছিল ভিন্ন। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকলেও তারা কাউকে কোনো বাধা দেননি। এমনকি অনেকের চোখের সামনেই যুবকরা ফটকা ও আতশবাজি ফুটিয়েছেন, কিন্তু তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। নগরজুড়ে ফানুস উড়ানো আর ফটকা-আতশবাজি ফুটানোর হয় মধ্যরাতের পরও।
শনিবার রাত দশটা থেকে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফটকা ও আতশবাজি শুরু হয়। রাস্তাঘাট, অলিগলি এবং প্রধান সড়কে যুবকরা জড়ো হতে থাকে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল ফটকা ও আতশবাজি। রাত ১২টা বাজার মাত্রই একযোগে ফটকা আর আতশবাজির শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো রাজধানী। রাত প্রায় একটা পর্যন্ত চলেছে এই আতশবাজির শব্দ এবং বিকট শব্দে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে গান বাজানো।
এদিকে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস না ওড়াতে ও আতশবাজি না করতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলেও কেউ তা শোনেনি। উল্টো একই চিত্র এই ফানুস ওড়ানোতেও দেখা গেছে। গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে ওড়ানো ফানুস থেকে রাজধানীর প্রায় ১০টি স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে কারণে এই অনুরোধ করেছিল ফায়ার সার্ভিস। এবারও অন্তত দুটি স্থানে আগুনের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা এবং ফায়ার সার্ভিসের অনুরোধ সত্ত্বেও থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, জাপান গার্ডেন সিটি, বছিলা, ঘাটারচর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখড়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ফানুসের পাশাপাশি ফটকা ও আতশবাজি ফোটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অন্তত ৫০টি ফানুস উড়াতে দেখা যায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগতরাও অংশ নেন। পাশাপাশি রাত ১২টা বাজার পর থেকে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, টিএসসি, নিউমার্কেট ও শ্যামলী ছাড়াও মিরপুর এলাকায় বিপুলসংখ্যক ফানুস উড়ানো হয়েছে। বলা চলে পুরো দেশজুড়ে এই অবস্থা চলতে থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ নিষেধাজ্ঞা দিয়েই চুপ থাকল। অথচ রাত ১২টার আগ থেকে এলাকায় ছেলেরা ফটকা ফোটাচ্ছে। এসব কি তারা দেখে না।
বছিলার নাসিমা বেগম বলেন, গত বছর এই মোহাম্মদপুরে ফটকা ও আতশবাজির কারণে এক শিশু অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিল। এবারও যে কে মরলো আল্লাহ পাক ভালো জানে। কান ঝালাপালা হয়ে গেল। অসহ্য শব্দ। পুলিশ কি এসব দেখছে না।
যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী ডালিম হায়দার বলেন, শনিবার সকাল সকাল ঘুমাবো বলে বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা ছিল। কিন্তু ঘুমাতে পারলাম না। আতশবাজির শব্দে ঘুমই ভেঙে গেল। ডিএমপির পক্ষ থেকে নাকি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তাহলে প্রশ্ন হলো-এসব ফটকা ও আতশবাজি ফোটালো কারা? নিশ্চয় ভূত ফোটায়নি।