পুলিশকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যে তাদের কাজের স্পৃহা কমতে পারে

সাম্প্রতিক বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে দলটির বিভিন্ন নেতাকে পুলিশ কিংবা প্রশাসনকে উদ্দেশ করে আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের মন্তব্যের শিকার হলে পুলিশের কাজের স্পৃহা কমতে পারে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

বিএনপির রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশ (৩ ডিসেম্বর) শেষে পরের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নব্য রাজাকার হলো আমাদের এ প্রশাসনের লাঠিয়াল বাহিনী। এখন সেই অক্সিলিয়ারি ফোর্স হয়ে গেছে এ পুলিশ, এ র‍্যাব।

শুধু এ একটি নয়, নানা সময়ে পুলিশ কিংবা প্রশাসনকে লক্ষ্য করে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন রাজনৈতিক নেতারা। কখনও এসব ঘিরে রাজনীতিতে যেমন চলে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, প্রশাসনেও দেখা দেয় প্রতিক্রিয়া।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে এসব আপত্তিকর বক্তব্যকে অনভিপ্রেত উল্লেখ করে সাবেক আইজিপি শহীদুল হক সময় সংবাদকে বলেন, পুলিশ কখনই কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ নয়। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ ধরনের (রাজাকার) মন্তব্যের শিকার হলে কাজের স্পৃহা কমতে পারে তাদের।

তিনি বলেন, পুলিশকে একটি বৃহত্তর দলের নেতা রাজাকার বলার বিপরীতে পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের স্বার্থে কাজ করে, জনস্বার্থে কাজ করে; তারা পাকিস্তান বাহিনীর স্বার্থে কাজ করে না।

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, জনস্বার্থে এবং জনশৃঙ্খলার স্বার্থে সংবিধানে আইনের দ্বারা পুলিশকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, পুলিশ সে ক্ষমতায় প্রয়োগ করেছে। পুলিশ তো গায়ের জোরে কিছু করেনি। পুলিশ তো সার্বিক চিন্তা করে, জনগণের কথা চিন্তা করে কাজ করেছে। সেটা যদি একটা রাজনৈতিক দল, বৃহত্তর রাজনৈতিক দল না মানে, এটা তো আইন অমান্যের শামিল হবে। বেআইনি কাজ করতে দেবে না, এজন্য পুলিশকে রাজাকার বলছে। এটা প্রতিবাদ হওয়া দরকার ছিল।

আর অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার প্রবণতা থেকেই এমন মন্তব্য আসছে।

এ বিষয়ে বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন সময় সংবাদকে বলেন, এমন বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর। জননিরাপত্তার কারণে কখনও কখনও কঠোর হতে হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের। সিদ্ধান্ত পক্ষ না গেলেই পুলিশকে প্রতিপক্ষ বানানো কাম্য হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কথা যদি কোনো রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে বলে হয়ে থাকে, তাহলে আমার মনে হয় খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং এটা তাদের দুরভিসন্ধিমূলকও কথা। এ ধরনের তুলনা হওয়ার দরকার নেই, উচিত না।

শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তারাও তখন পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন। যেই সরকারে থাকুক পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এভাবে রাজাকার বলে তুলনা করা বাঞ্ছনীয় নয়। বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার প্রবণতা থেকেই আসছে এমন মন্তব্য।

রাজনৈতিক সমস্যাগুলো নিজেদের মধ্যেই সমাধান করা উচিত বলে তারা মনে করেন।

সংবাদ সূত্রঃ সময় নিউজ