সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার শায়িত হলেন চিরনিদ্রায়। রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
দাফনের আগে মাহবুব তালুকদারকে তাঁর স্বজনেরা শেষ বিদায় জানান। এ সময় মাহবুব তালুকদারের দুই বোন ও স্বজনের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বাবার পা ছুঁয়ে শেষবারের মতো সালাম দেন মাহবুব তালুকদারের দুই মেয়ে। একমাত্র ছেলে বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের জলে শেষ বিদায় জানান।
গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মাহবুব তালুকদারের মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
আজ বিকেল পৌনে চারটার দিকে বারিধারার বাসা থেকে মাহবুব তালুকদারের মরদেহ নিয়ে রওনা করেন তাঁর স্ত্রী নিলুপার বেগম, দুই মেয়ে আইরিন মাহবুব ও আফরিন মাহবুব এবং ছেলে শোভন মাহবুব। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মাহবুব তালুকদারের লাশবাহী গাড়িটি বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পৌঁছায়। সেখানে তাঁর দুই বোন মাহফুজা চৌধুরী ও মারুফা রহিম তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন।
এর আগে বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মাহবুব তালুকদারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। এ সময় বিশিষ্টজনদের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানাজার আগে মাহবুব তালুকদারের ছেলে শোভন মাহবুব বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি দেশপ্রমিক ছিলেন। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতেন। তিনি কোনো ভুল–ত্রুটি করে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন।
এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমার কাছে পরিচিত নন। আমার কাছে তাঁর অবস্থান আরও অনেক ওপরে, একজন লেখক হিসেবে। তাঁর জীবন ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। তিনি যেসব বই লিখেছেন এর মধ্যে কতগুলো ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ও গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাঁকে মূল্যায়ন করি একজন ভালো লেখক হিসেবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘তিনি আমাকে চিনতেন না। প্রায় ৪৫ বছর আগে থেকে তাঁকে আমি চিনি। তাঁর লেখা ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’ সমকালীন ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে ভরপূর একটি বই। তিনি লেখক হিসেবেই বেঁচে থাকবেন, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নয়। তিনি পরকালে চলে গেছেন, যেকোনো মুহূর্তে আমাদেরও যেতে হবে। তাঁর জন্য আমরা দোয়া করব, আল্লাহ যাতে তাঁর বেহেশত নসিব করেন।’
জানাজা শেষে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট লাগোয়া খালি জায়গায় মাহবুব তালুকদারকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে লাশ নেওয়া হয় বারিধারার বাসায়। সেখানে ঘণ্টাখানেক রাখার পর নেওয়া হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।