রেলমন্ত্রীর আশ্বাসে রানিং স্টাফদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ সমিতি মাইলেজ বেতন, পেনশন ও আনুতোষিক হিসাব সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের দাবিতে সারা দেশে ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আশ্বাসের পর এই ধর্মঘট তারা প্রত্যাহার করেন।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ‘আমরা কর্মচারীদের পক্ষে। তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছিলাম। সে বিষয়ে কিছু আলাপ আলোচনার বিষয় রয়েছে। আগামী ১৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রী আমাকে সময় দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, এই সময়ের মধ্যেই বিষয়টির সমাধান পেয়ে যাবো। আগের মতো রেলের রানিং স্টাফরা যে সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিল, তারা সেই সুযোগ সুবিধা পাবে। যেসব দাবি আদায়ের জন্য কর্মচারীরা ধর্মঘট ডেকেছে, আমি আশা করছি, তাদের সেই দাবিগুলো পূরণ হয়ে যাবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো, সামনে ঈদ, আমাদের ১৬ কোটি মানুষের বাহন এই রেল। আগের সরকারগুলো নানারকম ষড়যন্ত্র করে রেলকে ভঙ্গুর করে রেখেছিল। বর্তমান সরকার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালে আলাদা মন্ত্রণালয় করে রেলকে বাঁচিয়েছিলেন। রেলকে যাতে আবার জনগণের বাহনে পরিণত করা যায়, সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।’

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘রেলের জনবল ২৫ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। একটি মহল এখনও রেলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আপনারা যারা রানিং স্টাফ রয়েছেন, তারা এই ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। আমরা সবাই মিলে একটি পরিবারের মতো এই রেলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবো। বিশেষ করে ঈদের আগে যাতে যাত্রীদের অসুবিধা না হয়, সে বিষয়টি আপনারা বিবেচনায় রাখবেন।’

সুজন বলেন, ‘আজকের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, আমি রেল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিচ্ছি, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেন কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়।’

মন্ত্রীর বক্তব্যের পর রেলওয়ে রানিং স্টাফ সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি সবাইকে কাজে যোগদানের আহ্বান জানান।

এর আগে অবসর-পরবর্তী সুবিধা ও ৭৫ শতাংশ রানিং অ্যালাউন্সের দাবিতে বুধবার ভোর থেকে আকস্মিক ধর্মঘট শুরু করেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এর ফলে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনসহ সারা দেশের অন্যান্য স্টেশন থেকে ট্রেন চলা বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ এমন ধর্মঘটে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ ও অফিসগামী যাত্রীরা।

ট্রেন চালকদের দাবি ছিল, নির্দিষ্ট আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে যে অতিরিক্ত ভাতা (মাইলেজ) দেওয়া হয়, সেটা যেন সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা করে পরিশোধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রেলের সংস্থাপন কোড অনুযায়ী, রানিং স্টাফরা দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বা ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে একদিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা রানিং ভাতা হিসেবে পাবেন। ভাতার ৭৫ শতাংশ টাকা যোগ হতো পেনশনে। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে রেলের রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা বাতিল করে।