রাজধানীর নদ্দা এলাকায় সন্তানকে চড় (থাপ্পড়) দেওয়ায় ফুফু নিকিতা আক্তার (৪০) ও ভাতিজি জেসমিন আক্তারের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডা ও একপর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি। এসময় ঘরে থাকা শিলপাটার শিল দিয়ে ফুফুর মাথায় আঘাত করেন জেসমিন।
এতে নিকিতা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বটি দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে জেসমিন। এতেই নিকিতার মৃত্যু হয়।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত জেসমিন আক্তার হত্যাকাণ্ডের কথা এভাবেই শিকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকাল ৭টা থেকে দুপুরের মধ্যে যেকোনো এক সময় রাজধানীর গুলশান থানার নদ্দা এলাকায় ভাতিজির শিলের আঘাতে ফুফু নিকিতার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযুক্ত জেসমিন আক্তারকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করে এবং নিকিতার মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
শুক্রবার (১১ জুন) দুপুর ২টার দিকে নিকিতার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর নিকিতার মরদেহ নিয়ে তার ভাই মো. আজাদ হোসেন গ্রামের বাড়ি শেরপুর সদরের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানেই তার দাফন সম্পন্ন হয়।
পুলিশ জানায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলশানের নদ্দায় এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার জেসমিন আক্তার তার ফুফুকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত কোথায়?
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিকিতা আক্তার-মুরাদ দম্পতি রাজধানীর গুলশান থানার নদ্দা এলাকায় নিজ বাসায় থাকতেন। এ দম্পতির কোনো সন্তান নেই। এদিকে, দু’একদিন আগে ভাতিজি জেসমিন আক্তার তার দুই মেয়েকে নিয়ে ফুফুর বাসায় (নিকিতা) বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) ভোরে যখন নিকিতা ঘুমিয়ে ছিলেন তখন জেসমিন আক্তারের বড় মেয়ে ঘরে পানি ফেলে দেয়। এতে নিকিতার ঘুম ভেঙে যায়। বিরক্ত হয়ে ভাতিজির ওই মেয়েকে থাপ্পড় মারেন তিনি। এতে জেসমিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তার ফুফুকে (নিকিতা) জিজ্ঞাসা করেন কেন তার মেয়েকে মারলেন। এতে তাদের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নিকিতা তার হাতের কাছে ঝাড়ু জাতীয় কিছু দিয়ে জেসমিনকে আঘাত করেন। তখন জেসমিন ক্ষোভে ঘরে থাকা শিল দিয়ে ফুফুর (নিকিতা) মাথার পেছনে আঘাত করেন। এরপর নিকিতা মাটিতে পড়ে গেলে বটি দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন জেসমিন। এতে ঘটনাস্থলেই নিকিতার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসান বলেন, ফুফু নিকিতাকে হত্যার বিষয়টি গ্রেফতার জেসমিন আক্তার স্বীকার করেছেন। বড় মেয়েকে চড় দেওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন জেসমিন।
নিহতের পরিবারের দাবি:
নিহত নিকিতার ভাই আজাদ হোসেন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। জেসমিনই বলতে পারে কী কারণে সে আমার বোনকে হত্যা করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিকিতা স্বামীর সংসারে খুব শান্তিতে ছিলো না। প্রায় আমার বোনের ওপর নির্যাতন চালাতো তার স্বামী মুরাদ। এমনিতে মুরাদ কিছু্ করতো না। বাসায় থাকতো। প্রায় আমার বোনের জায়গা জমি তাকে লিখে দেওয়ার কথা বলতো। আর এতে আমার বোন (নিকিতা) রাজি না হলেই তাকে মারধর করতো। এছাড়া বিভিন্ন সময় আমার বোনের সঙ্গে কথায় কথায় খারাপ আচরণ ও মারধর করতো মুরাদ। তবে আমরা বোনের হত্যাকারী জেসমিনের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।