ঘোষিত কঠোর লকডাউনে জরুরি কাজে বাইরে যেতে ‘মুভমেন্ট পাস’ উদ্বোধন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এটি উদ্বোধনের পরেই প্রথম ঘণ্টায় আবেদন জমা পড়েছে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার। আর প্রতি মিনিটে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় পনেরো হাজার।
আজ মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ‘মুভমেন্ট পাস’ উদ্বোধনকালে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, যাদের একান্তই বাইরে যাওয়া প্রয়োজন হবে, তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতের জন্য অফিশিয়াল কিংবা জরুরি প্রয়োজনে ‘মুভমেন্ট পাস’ নেয়া লাগবে। তবে এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের এই পাস নেয়া লাগবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (১৪ এপ্রিল) কাউকে সড়ক-রাস্তাঘাট এবং বাইরে দেখতে চাই না। বিনা প্রয়োজনে কাউকে দেখতে চাই না। আমরা চাপপ্রয়োগের চেয়ে নিজেদের উদ্যোগেই এই দায়িত্ব পালন করব। এসব না মানলে সমগ্র বাংলাদেশকে আইসোলেশনে নিতে হবে।’
বেনজীর আরও বলেন, ‘সীমিত কারণে বের হওয়া লাগতে পারে। তারা মুভমেন্ট পাস নেবেন। রাস্তাঘাটে কোনো আড্ডা দেবেন না। বিভিন্ন সড়কে, মোড়ে আড্ডা দেবেন না। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তরুণরা কেউ বের হবেন না। বের হতে হলে অবশ্যই দ্রুত ঘরে ফিরতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গতবছর যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি, এবারও দ্বিতীয় ওয়েভ নিয়ন্ত্রণ করব। তবে অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা বন্ধ করতে হবে। গতবছর লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এবারো গত দুদিন ধরে ঢাকা ছাড়ছেন, এগুলো ঠিক না। এগুলো নৈতিকভাবে খুবই অন্যায় কাজ।\’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল (১২ এপ্রিল) বিভিন্নভাবে যারা যেখানে পৌঁছেছেন, তারা সেখানেই থাকবেন। গ্রামবাসীকে বলব, লক্ষ্য রাখবেন, যদি আক্রান্ত কেউ থাকেন, তাহলে সে গ্রামের অন্যকেও আক্রান্ত করবে। তারা সাতদিন ঘরে থাকবেন। সরকার যেভাবে বলছে সেভাবে নির্দেশ মানবেন।’
গাড়ি বের করার ব্যপারে নিরুৎসাহী করে আইজিপি বলেন, অবশ্যই মুভমেন্ট পাস নেবেন। পুলিশকে সবাই সহযোগিতা করবেন।
করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আইজিপি বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা কোনো প্রাণহানি চাই না। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের প্রধান উপায় হচ্ছে ব্যক্তিগত সচেতনতা। আমাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া। এসব বিধি আমাদের মনোযোগ ও আন্তরিকতা দিয়ে মানতে হবে।’
এদিকে পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সর্বাত্মক লকডাউনে জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে চলাচলের জন্য ১৪টি শ্রেণিতে ‘মুভমেন্ট পাস’ দেবে পুলিশ।
মুদি দোকানে কেনাকাটা, কাঁচা বাজার, ওষুধপত্র, চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, ত্রাণ বিতরণ, পাইকারি বা খুচরা ক্রয়, পর্যটন, মৃতদেহ সৎকার, ব্যবসা ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে দেয়া হবে এই ‘মুভমেন্ট পাস’।
এছাড়া যাদের বাইরে চলাফেরা প্রয়োজন কিন্তু কোনো ক্যাটাগরির সঙ্গে মিল নেই, তাদের অন্যান্য ক্যাটাগরিতে পাস দেয়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে বলেও পুলিশ সদর দফতর থেকে জানা গেছে।
যেভাবে পাওয়া যাবে ‘মুভমেন্ট পাস’:
movementpass.police.gov.bd এর ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাস সংগ্রহ করতে পারবেন যে কেউ। তবে প্রতিটি পাস একবারই ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ যাওয়া-আসার জন্য আলাদা আলাদা পাস সংগ্রহ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, যার জন্য পাসটি দরকার সেই ব্যক্তির নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্স, যে স্থানে যাচ্ছেন সে জায়গার নাম, যেখান থেকে যাবেন সেই স্থানের নাম ও যাত্রার কারণ ইত্যাদি তথ্য পূরণ করে উল্লেখিত লিংকে আবেদনের পর পুলিশ অনলাইনে কিউআর কোড স্ক্যানারসহ একটি পাস ইস্যু করবে। এই কোডটি স্ক্যান করেই চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা আবেদনকারীর তথ্য ও যাত্রার কারণ নিশ্চিত করবেন।