মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিংয়ের একটি অন্যতম প্রধান সুবিধা হচ্ছে সময় স্বল্পতা। অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং করায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে তাই বলে থেমে নেই মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন।
অ্যাপে নিষেধ, তাই ‘ক্ষ্যাপেই’ তথা চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করছেন বাইকচালকেরা। আজ বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এমন চিত্র দেখা গেছে। গাবতলী, ধানমন্ডি, মিরপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় দেখা যায়, অফলাইনেই ভাড়া নির্ধারণ করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে বাইকে।
নিষেধাজ্ঞার পরেও এমন যাতায়াত নিয়ে যুক্তি আছে যাত্রী ও চালক উভয়েরই। চালকেরা বলছেন, রাইড শেয়ার করাই কর্মসংস্থান হওয়ায় আয়ের কোনো বিকল্প পথ নেই। আর তাই বাধ্য হয়েই বাইকে যাত্রী পরিবহন করছেন।
রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে যাত্রী পরিবহন করা এক বাইক চালক ফজলুর রহমান বলেন, একটা প্রাইভেট জব করতাম, করোনার মধ্যেই চাকরি যায়। লকডাউন উঠে গেলে একটা বাইক কিনে রাইড শেয়ার করা শুরু করি। পাঠাও এবং উবারে রাইড শেয়ার করি। আমার তো দৈনিক আয়। এটা ছাড়া তো আর কোনো ইনকাম নাই। এখন যদি রাইড না দেই, তাহলে চলব কীভাবে? সংসার চালাবো কীভাবে?
অন্যদিকে, গণপরিবহনে সীমিত সংখ্যক যাত্রী নেওয়ায় এক রকম নিরুপায় হয়েই বাইকে যাতায়াত করতে হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা। গাবতলী পয়েন্ট থেকে বাইকে ওঠা মিরাজ আকন্দ বলেন, বাসে উঠতে পারছি না। অফিসে যেতে হবে। অটোরিকশা বা কার নিয়ে প্রতিদিন যাওয়ার মতো সক্ষমতা নেই আমার। তাই বাধ্য হয়েই বাইকে যেতে হচ্ছে। অফলাইনেই যেতে হচ্ছে। কিছু করার নেই।
এদিকে, অফলাইনে যাত্রী পরিবহন করা বাইকচালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। বিভিন্ন পয়েন্টে দু’জন আরোহী বিশিষ্ট মোটরবাইক থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশদের।
মিরপুর ১২ নম্বরের পল্লবী থানার সামনে দায়িত্বরত দুই ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা সার্জেন্ট অসীম ও সার্জেন্ট মাহাবুব জানান, যেসব মোটরবাইকে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সড়ক নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হচ্ছে। সার্জেন্ট মাহাবুব বলেন, যারা আত্মীয়স্বজন ছাড়া বাইকে যাত্রী পরিবহন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছি। সড়ক পরিবহন আইনের ‘সরকারি আদেশ অমান্য’ করার অপরাধে এ মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগই আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত হওয়ার কারণ দেখাচ্ছেন।
অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার কারণে এ খাতের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে, অ্যাপ ভিত্তিক সেবা বন্ধ রাখায় অফলাইনে যাত্রী পরিবহন করার প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।
পরিবহন টিকেট এবং রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ‘সহজ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদির বলেন, অনলাইনে রাইড শেয়ারিং বন্ধ করল, কিন্তু অফলাইনে কি বন্ধ করতে পারবে? এভাবে সেবা বন্ধ রাখলে অফলাইনে যাত্রী পরিবহন করার বিষয়টি আরও অনুপ্রাণিত হয়। রিকশার মতো করে বাইকে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। চালকদের জন্যও ভালো, আমাদের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে কোনো কমিশন দিতে হচ্ছে না। গণপরিবহনের সংকট, তাই যাত্রীর কাছেও কোনো উপায় নেই, এভাবে যাওয়া ছাড়া। মাঝখান থেকে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। আগের বার যখন অ্যাপ ভিত্তিক সেবা বন্ধ করা হয়েছিল, তখন প্রায় ৫০ ভাগ বাইকচালক অফলাইনে যাত্রী পরিবহন শুরু করেন, যারা এখনও সেটি অব্যাহত রেখেছেন। এর ফলে প্রায় অর্ধেক বাজার আমরা হারাচ্ছি।