সাধারণত প্রতারণা করা হয় আইন অমান্য করে, যাতে প্রতিযোগিতা মুলক পরিস্থিতিতে অসম সুবিধা পাওয়া যায়। দিন দিন বেড়েই চলছে অনলাইন প্রতারনা। নাম তার রাফসান চৌধুরী ওরফে তানভীর। বয়স ৩১। নিজে করতে পারেননি এসএসসি পাস, অথচ অন্যকে প্রশ্নপত্র দেয়া ও জিপিএ বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। শুধু টাকা হাতিয়ে নিয়েই ক্ষ্যন্ত হননি তিনি, প্রশ্নপত্র দেয়ার লোভ দেখিয়ে বহু তরুণীকে করেছেন শয্যাসঙ্গী। অভিযোগ পেয়ে এই প্রতারককে গ্রেপ্তার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ধুরন্ধর এই যুবক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে এমন প্রতারণা করতো বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিবি বলছে, গ্রেপ্তারকৃত রাফসান এসএসসি, জেএসসি, এইচএসসি কিংবা মেডিকেলের প্রশ্নপত্র দেয়ার লোভ দেখিয়ে অর্থ আদায় করতো। এরপর সুযোগ বুঝে তরুণীদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতো। একসময় ভিডিও কলে অশ্লীল ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিং করতো তাদের।
ভুয়া ফেইসবুক আইডি দিয়ে, বেশ কয়েকটি গ্রুপ তৈরি করে রাফসান। এরপর সেখানে দিতো বিজ্ঞাপন। প্রশ্নপত্র ফাঁস, জিপিএ বাড়িয়ে দেয়া, পরীক্ষার রেজাল্ট পাল্টিয়ে দেয়ার মত সব বিষয় ছিলো তার কাছে হাতের মোয়া। দেশের প্রথম সারির শীর্ষে থাকা ১টি কলেজের এক শিক্ষার্থীকে তার ফাঁদে আটকে ফেলে। পরে ভিডিও কলে কথা বলে ধারণ করে তার অশ্লীল ভিডিও। ব্ল্যাকমেইলিং করতে শুরু করে সেই শিক্ষার্থীকে।
পুলিশ বলছে, সাধারণ মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারনে রাফসানের মতো প্রতারকরা প্রতারণা করার সুযোগ পাচ্ছে। প্রতারণার পাশাপাশি রাফসান মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলো। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
পুলিশের গোয়েন্দারা বলছেন, নানাভাবে ভুলিয়ে নারীদের ভিডিও কলে নিয়ে এসে আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করে। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। ঢাকার এক স্কুল শিক্ষিকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তাও তার হাত থেকে পার পাননি।
প্রতারণার শিকার এক নারী বলেন, রাফসান চৌধুরী প্রথমে আমাকে ফেসবুকে নক করে। ফটো শুটের জন্য নাকি তাদের কিছু মেয়ে লাগবে। তারপর সে আমাকে ভিডিও কল দেয়। ভিডিও কলে কথা হওয়ার তারপর সে আমার বিকাশ নম্বর নেয়। এরপর সে আমাকে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে।
দীর্ঘদিন অভিযানের পর রাজধানীর খিলগাঁও থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ২০১৬ সাল থেকে জালিয়াতিতে জড়িত রাফসান এর আগেও তাকে ২ বার গ্রেপ্তার হয়। জামিনে বেরিয়ে এসে ফের একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সে।
অভিযুক্ত রাফসান বলেন, ওই কলেজ পড়ুয়া মেয়েটার সঙ্গে আমার ভিডিও কলে কথা হয়। আমি ওর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলি। আমি ওইটার স্ক্রিন ভিডিও রাখি।
গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমানা বলেন, সে আসলে মেধাহীন। কিন্তু অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির। যে কিনা প্রশ্নপত্র ফাঁসের নাম করে অথবা ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাইয়ে দেয়ার নাম করে দেশের বিভিন্ন জায়গার শত শত মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কাউকে আবার যৌন হয়রানিও করেছে।