বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) জানিয়েছে যে, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হলে শহরের ভারবহন ক্ষমতা বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক ধারণ ক্ষমতা ও জনঘনত্ব নির্দিষ্ট করে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। মঙ্গলবার ‘ঢাকা শহরের জনঘনত্ব, বাসযোগ্যতা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিআইপির প্রতিবেদন প্রকাশ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, বিশ্বে এক একর জায়গার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ঢাকার লালবাগ এলাকায়। আর বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১২ ভাগেরও বেশি মানুষ থাকেন রাজউক এলাকায়। রাজউক এলাকার আয়তন দেশের মোট আয়তনের মাত্র ১ ভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যেকোনও শহরের বাসযোগ্যতার অন্যতম পরিমাপক শহরের জনঘনত্ব। সেই হিসেবে বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা শহরের অতি নিম্ন অবস্থানের প্রধান কারণ অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও অধিক জনঘনত্ব। উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় জনসংখ্যা, জনঘনত্ব ও শহরের বিদ্যমান অবকাঠামো ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধাদির সাপেক্ষে শহরের ভারবহন ক্ষমতা বিবেচনা না করা হলে যে কোনও শহর তার বাসযোগ্যতা হারাবে। ঢাকা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
বিআইপির প্রতিবেদনে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জনঘনত্বের একটি তুলনা চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, একটি বড় শহরের জনঘনত্বের জন্য মানদণ্ড ধরা হয় প্রতি একরে ৭০-৮০ জন। যা সর্বোচ্চ ১২০ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহর এলাকায় হতে পারে।
জাপানের টোকিও শহরের কেন্দ্রীয় এলাকার ওয়ার্ড সমূহের জনঘনত্ব একর প্রতি ৯০ এর নিচে, অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি শহরের সর্বোচ্চ জনঘনত্ব প্রতি একরে ৫৮ জন এবং সিঙ্গাপুরকে উঁচু ভবন এর শহর বলা হয়, কিন্তু সেখানেও শতকরা ৮০ ভাগ জমি সরকারের মালিকানাধীন এবং শতকরা ৯০ ভাগ আবাসন সরকার প্রদান করে থাকে এবং একটা পরিকল্পনা এলাকা (প্ল্যানিং ডিসট্রিক্ট) ব্যতীত বাকি সকল পরিকল্পিত শহরের জনঘনত্ব প্রতি একরে ৮০ জন এর নিচে।
তিনি বলেন, যে কোন শহরের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় রাস্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকার ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এ ভবনের উচ্চতা নির্ধারণে রাস্তার প্রশস্ততার বিবেচনা বাদ দিয়ে করা হয়েছে। এতে অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধাদির ভিত্তিকে এলাকাভিত্তিক ভারবহন ক্ষমতাকে বিবেচনায় না নিয়ে সুউচ্চ ফ্লোর এরিয়া অনুপাত (এফএআর) প্রস্তাব করার ফলে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
এছাড়াও ঢাকার অতিঘন এলাকায় ব্যক্তিগত মালিকানায় ১, ২ বা ৩ তলা বিশিষ্ট ভবনের সংখ্যা শতকরা ৪০-৫০ ভাগ আছে, যেগুলো বিদ্যমান ইমারত সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী ভবিষ্যতে পুনঃউন্নয়ন করা হলে এসব এলাকার জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব বাসযোগ্যতার জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।