ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজধানী থেকে কুকুর অপসারণের উদ্যোগ নিলেও উত্তর সিটি করপোরেশন সেই পথে হাঁটবে না। সংস্থাটি জানায় তারা বেওয়রিশ কুকুর নিধন বা অপসারণ না করে বন্ধ্যাকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিএনসিসি’র মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন ‘অভয়ারণ্য’ নামে একটি এনজিও’র সঙ্গে পূর্বের করা চুক্তি আবার নবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসি তার আওতাধীন এলাকা থেকে বেওয়রিশ কুকুর অপসারণ করছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এরইমধ্যে কয়েকশ’ বেওয়রিশ কুকুরকে সিটি করপোরেশনের মাতুয়াইল এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে গত ৩০ জুলাই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সংস্থার মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, ‘ঢাকাবাসীর অভিপ্রায় অনুযায়ী, বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’
আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়। তাতে বলা হয়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনা রয়েছে ৩০ হাজার কুকুরকে শহরের বাইরে স্থানান্তর করার। এরপরই এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। মানববন্ধনের আয়োজন করা হয় পক্ষে-বিপক্ষে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠে সমালোচনার ঝড়।
ডিএসসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, ‘প্রাণী কল্যাণ আইন অনুযায়ী, প্রাণী অপসারণ অপরাধ, এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, সিটি করপোরেশন ব্যতীত ব্যক্তি কিংবা সংস্থা পর্যায়ে। সিটি করপোরেশনের যে মৌলিক কার্যাবলি আছে, সেখানে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর তৃতীয় তফসিলের ১৫.৩, ১৫.৪, ১৫.৫ ও ১৫.১০ এবং পঞ্চম তাফসিলের ৫১ ধারা ও সপ্তম তফসিলের ১৮ ধারা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন যদি মনে করে কোনও বেওয়ারিশ কুকুর অথবা কোনও বেওয়ারিশ প্রাণীকে অপসারণ করতে পারে, এমনকি নিধনও করতে পারে। আমরা নিধন করছি না, অপসারণ করছি।’
কুকুর নিয়ে দক্ষিণ সিটির এমন অবস্থান থাকলেও উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, বন্ধ্যাকরণেই বিষয়টির সমাধান খুঁজছে তারা। কুকুর স্থানান্তর, অপসারণ বা নিধন করবে না সংস্থাটি। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থার মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের মহাখালীতে যে মার্কেট রয়েছে, সেখানে কুকুরের জন্য আমরা একটা হাসপাতাল করেছি। আমি নিজেও করোনার সময় বিভিন্ন স্থানে কুকুরকে খাবার দিয়েছি। আমি এখনও তাদের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি। আমরা মনে করি, কুকুরকে স্থানান্তর করলে সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের ২০১৯ সালের আইনে কুকুর বা বন্যপ্রাণীকে কীভাবে দেখতে হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।’ মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কুকুর আমাদের অনেকের বাসাবাড়ি ও রাস্তার সামনে থাকে। এটা কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, ইঁদুরসহ ক্ষতিকর অনেক প্রাণী মেরে ফেলে। অনেক অপরিষ্কার জায়গাকে পরিষ্কার করে আবার অপরিষ্কারও করে। আমি যেটা মনে করি, কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করতে হবে। জলাতঙ্কের ইনজেকশন দিতে হবে তাদেরকে। আমাদের ‘অভয়ারণ্যে’ সঙ্গে যে চুক্তি ছিল সেটার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে আমরা আবারও চুক্তিতে যাচ্ছি। এই তথ্য কিন্তু আমি সবাইকে দিচ্ছি এবং নগরবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে কোনও কুকুর নিধন হবে না। কুকুরকে আমাদের অনেকেই ভালোবাসেন। অনেকেই তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে খাবার দিচ্ছেন। কুকুরের সঙ্গে অনেকের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আমার মেসেজ খুবই স্পষ্ট—আমাদের উত্তর সিটিতে কোনও ধরনের কুকুর উচ্ছেদ বা অপসারণ বা ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হবে না। যদি কোনও নাগরিক তা করে, তাহলে আমরা ২০১৯-এর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেখুন, কুকুরকে যদি আপনি বিরক্ত না করেন, সে আপনাকে কামড়াবে না। আপনি যদি কুকুরকে ঢিল বা লাঠি দিয়ে আঘাত করেন, তখন কুকুর আপনাকে কামড়াবে। আর একটা কুকুরকে যদি আপনি একটি জায়গা থেকে আরেকটি জায়গায় নিয়ে যান, কুকুর কিন্তু সেখানে চিৎকার করবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, একটা কুকুর যে এলাকায় থাকে, সেখানে সে অন্য এলাকার কুকুর ঢুকতে দেবে না। যদি ওই এলাকায় কোনও কুকুর ঢুকে পড়ে, তাহলে সেখানকার স্থানীয় কুকুরগুলো চিৎকার করতে থাকবে।’
কুকুরকে বিরক্ত না করার আহ্বান জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আপনি যদি সকাল বেলায় নামাজ পড়তে ঠিকমতো যান, তাহলে সে আপনাকে কিচ্ছু করবে না। কুকুর কুকুরের জায়গায় থাকবে। আমরা আমাদের জায়গায় থাকবো। তাদেরকে নিয়েই কিন্তু আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। ২০১৯ সালের আইনেই পাস করে দেওয়া হয়েছে— কুকুরকে কোনও ঢিল, লাঠি বা অন্যভাবে আঘাত করা যাবে না।’